Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:58 am

পাটশিল্পের গৌরব ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয়টি পাটকল ও ‘বহুমুখী পাটপণ্য মেলা-২০২৪’ এর উদ্বোধনকালে ভাষণে নতুন পাটপণ্য উদ্ভাবন এবং বিদেশে বাজার খুঁজে বের করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা করেন, সরকার কৃষি ও রপ্তানিপণ্য হিসেবে পাটের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ দেবেন।

পাট আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতের অংশ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অবদান বিবেচনায় একসময় সোনালি আঁশ হিসেবে এর পরিচিতি ছিল বিশ্বজুড়ে। গত শতাব্দীর ৮০ সাল পর্যন্ত কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য মোট রপ্তানিতে ৫০ শতাংশ অবদান রেখে রপ্তানি আয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছিল। আশির দশকের শেষার্ধে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের আয়কে অতিক্রম করে পোশাকশিল্প রপ্তানি আয়ে প্রথম স্থানে চলে আসে। বর্তমানে পাটশিল্পে আমাদের রপ্তানি আয় অনেক কম। এরই মধ্যে দেশি পাটের জীবনরহস্য উšে§াচনের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন আমাদের বিজ্ঞানীরা। পাটের জন্য ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবনরহস্য উšে§াচন করেন তারা। ২০১৭ সালে পাটের আঁশের মান, দৈর্ঘ্য ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতার জন্য দায়ী চারটি জিনের পেটেন্ট (কৃতিস্বত্ব) পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে বিশ্বের যেকোনো স্থানে পাট নিয়ে গবেষণা হলে বাংলাদেশ অর্থ পাবে।

বকেয়া পাওনার দাবিতে প্রায়ই পাটশিল্পের শ্রমিকদের নামতে হচ্ছে রাজপথে। পাটশিল্পের উন্নয়নে উদ্ভূত সংকট নিরসনে শ্রমিকরা সরকারঘোষিত মজুরি কমিশনের রোয়েদাদ বাস্তবায়ন, পাটকলগুলোর আধুনিকীকরণের মাধ্যমে লাভজনক শিল্পে পরিণত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বিজেএমসি কর্তৃক ইজারা দেয়া হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে; সেগুলো উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হচ্ছেÑচট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কেএফডি জুট মিলস, নরসিংদীর ঘোড়াশালে বাংলাদেশ জুট মিলস, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে জাতীয় জুট মিলস, যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ এবং যশোরের রাজঘাটে কার্পেটিং জুট মিলস এবং খুলনার খালিশপুরে দৌলতপুর জুট মিলস লি.। নতুন ব্যবস্থাপনায় চালু হওয়া এসব জুটমিল পাটশিল্পের সোনালি গৌরব ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০টি মিলের মধ্যে ছয়টি চালু করায় ১২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং বাকি ১৪টি মিল চালু হলে আরও ২৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো চালুর উদ্যোগও নিতে হবে। পাটের সুতা, বস্তা, চট, কার্পেট পণ্যের পাশাপাশি পাট দিয়ে পর্দার কাপড়, কুশন কভার, কার্পেট, শাড়ি তৈরি হয়। গরম কাপড় তৈরির জন্য উলের সঙ্গে মিশ্রণ করা যায়। পাটখড়ি থেকে উন্নতমানের কার্বন তৈরি হচ্ছে। পাটের আঁশ থেকে প্রসাধনী, ওষুধ, রং তৈরি সম্ভব। বাঁশ এবং কাঠের বিকল্প হিসেবে পার্টিকেল বোর্ড, কাগজের মণ্ড ও কাগজ তৈরিতেও পাটখড়ি ব্যবহƒত হয়। শিল্প খাত বিবেচনায় পাটশিল্প এখনও বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। পাটশিল্পের সঙ্গে দেশের লাখ লাখ কৃষক-শ্রমিক জড়িত। বিদ্যমান পাটকল

প্রধানমন্ত্রী পরিবেশবান্ধব পাটশিল্পকে কৃষিজাত ও রপ্তানিমুখী পণ্যের স্বীকৃতি এবং প্রণোদনা দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় নীতিসহায়তা পেলে এবং পাটশিল্পে জড়িতরা দায়িত্বশীল হলে এর সঠিক ব্যবহারে তারা ব্যক্তিগতভাবে যেমন লাভবান হবে তেমনি দেশও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।