বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল নদীবাহিত পলিমাটি দ্বারা বেষ্টিত বলে এখানকার মাটি অনেক উর্বর। ফলে একটি জমিতে স্বল্প সময়ে, কমে খরচে অধিক ফসল উৎপাদন করা যায়। এ উৎপাদনকৃত ফসল দিয়ে দেশের চাহিদা মিটানোসহ উদ্বৃত্ত ফসলের অংশ বাইরের দেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। বাংলাদেশ এমনই একটি অর্থকরী ফসল হচ্ছে পাট। বাংলাদেশে প্রতি বছর পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। দেশের মোট জিডিপিতে প্রায় ৫-৬% পাট ও পাটজাত পণ্যের অবদান রয়েছে।
পাট দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও নদীবাহিত পলিমাটিতে ভালো জš§ায়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ জায়গাজুড়ে নদীবাহিত পলিমাটি থাকার কারণে নদীর পাড়ের অঞ্চলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পাট জš§ায়। ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, যশোর, ঢাকা, টাঙ্গাইল, জামালপুর অঞ্চলগুলো নদীবাহিত পলিমাটি দ্বারা বেষ্টিত থাকার কারণে পাট অনেক ভালো জš§ায়। এসব অঞ্চল থেকে চাহিদা অনুযায়ী পাট বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। শুধু বাইরের দেশে নয়, বাংলাদেশেও বর্তমান পাটের অনেক চাহিদা রয়েছে। পলিথিন ব্যবহারে ক্ষতির দিকে চিন্তা করে, পলিথিন ব্যবহার রোধে পরিবেশবান্ধব পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ। তাই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও দেশের চাহিদা মেটাতে পাট ফসলের দিকে নজর দেয়া উচিত। বাংলাদেশের মাটির উর্বরতার কারণে প্রচুর পরিমাণ ফসল উৎপাদন হলেও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষকেরা কাক্সিক্ষত ফসল ক্ষেত থেকে তুলতে পারেন না। প্রতি ফসলি মৌসুমে বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগে থাকার কারণে ফসল চাষে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া কৃষকদের কৃষিবিষয়ক অজ্ঞতা থাকার কারণে আশানুরূপ ফলন পান না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে কাক্সিক্ষত ফসল কীভাবে তুলতে হয় এ বিষয়ে কৃষকদের এখনও অজানা রয়েছে। যেমন বর্তমানে এমনই একটি সমস্যা নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পাটচাষিরা। এ বছর পাটের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে জাক দিতে না পারার কারণে অনেক পাট নষ্ট হচ্ছে। পাট জাক দেয়ার জন্য কৃষকেরা পাটকে কয়েক কিলোমিটার বহন করে নিয়ে যাচ্ছে জলাশয়ের কাছে। ফলে এতে উৎপাদন খরচ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমন ভালো হচ্ছে না পাটের আঁশের মান। তাই এমতাবস্থায় পাটের আঁশ ছাড়াতে, খরচ ব্যয় কমাতে এবং পাটের আঁশের মান ঠিক রাখতে দরকার রেবন রেটিং পদ্ধতি। রেবন রেটিং পদ্ধতি হলো এমন একটা পদ্ধতি যে পদ্ধতিতে পাট কাটার পর পাটের থেকে আঁশকে কাঁচা অবস্থায় ছাড়িয়ে নেয়া হয় এবং পানিতে শুধু আঁশকে জাক দেয়া হয়। কৃষকদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এ পদ্ধতিটি বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিউট আবিষ্কার করেছেন। এ পদ্ধতি অবলম্বন করে যেমন অল্প পানিতে পাট জাক দেয়া যায়, তেমনি প্রচলিত পদ্ধতি থেকে পাটের আঁশের মানও ভালো পাওয়া যায়। তাই বর্তমান পানি সংকটের মুহূর্তে কৃষকদের পাটের আঁশ ছাড়াতে রেবন রেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। কারণ এ পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় গর্ত খুঁড়ে বা তাগারি মধ্যে পানি দিয়ে একসঙ্গে অনেক কাঁচা পাট জাক দেয়া যায়। এ পদ্ধতিতে প্রচলিত পদ্ধতিতে থেকে সময়ও কম লাগে।
বর্তমানে বিশ্ববাজারে পাটের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে প্রতিযোগিতামূলক পাটের বাজার তৈরি হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য অবশ্যই পাটের আঁশের মানের দিকে নজর দিতে হবে। যদি পাটের আঁশের মান ভালো হয় তাহলে বৈদেশিক বাণিজ্যক্ষেত্রে আমাদের দেশের পাটের চাহিদা টিকে থাকবে এবং দেশের কৃষকেরা পাটের ন্যায্যমূল্য পাবে। তাই পাটের আঁশের মান ধরে রাখতে রেবন রেটিং পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কৃষি কর্মকর্তারা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের রেবন রেটিং পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেন এবং রেবন রেটিং পদ্ধতির সুবিধা বুঝিয়ে কৃষকদের রেবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়ানো ও জাক দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারেন।
শেখ আবদুল্লাহ
শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ
ঢাকা কলেজ