Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 11:28 am

পাটের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে এফবিসিসিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাট আমাদের সোনালি ঐতিহ্য। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের নিজস্বতা ও গৌরবের ইতিহাস। পাটের সোনালি আঁশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। পাট শিল্পের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করে এই শিল্পের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে এই খাতের উদ্যোক্তা, সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

পাট শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এই মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। গতকাল বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআই’র গুলশান কার্যালয়ে ‘পাট শিল্প খাতের বিরাজমান সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণ’ বিষয়ক এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সুদূর প্রাচীনকাল থেকে আমাদের পাট শিল্প ছিল অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। একসময় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান হাতিয়ার ছিল এই পাট। এমনকি স্বাধীনতার পরেও দুয়েক বছর আমাদের পাটশিল্পের গৌরব ছিল অক্ষত। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সেই পাটশিল্পের গৌরব আজ নানা কারণে ম্লান হতে বসেছে। এই শিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

মাহবুবুল আলম আরও বলেন, পাটের সোনালি আঁশ কাজে লাগিয়ে কীভাবে রপ্তানি বৃদ্ধি করা যায়, কীভাবে পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় সেটি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। পাটজাত পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে বিশ্বের নতুন বাজার সৃষ্টি ও রপ্তানি বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে এফবিসিসিআই।

মতবিনিময় সভায় পাটজাত শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংগঠন ও এই খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা পাটশিল্পের বিরাজমান সমস্যা সমাধানে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কাঁচাপাটের ওপর ২ শতাংশ উৎসে কর রহিতকরণ, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ শতভাগ বাস্তবায়ন ও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধকরণ, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পাটজাত পণ্যকে কৃষিজাতপণ্য হিসাবে ঘোষণা বাস্তবায়ন, পাটশিল্পকে রক্ষার জন্য ইডিএফের (এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) মতো জেএসডিএফ (জুট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) গঠন, পাটকলগুলোর মেশিনারিজের আধুনিকায়নের জন্য ভারতের ন্যায় ৩০ শতাংশ ভর্তুকি ও স্বল্পসুদে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করা, কভিডকালীন শিল্প খাতে সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা বেসরকারি পাটকলগুলো না পাওয়ায়  তার পরিবর্তে ব্যাংক সুদ মওকুফ করা, সকল পাটপণ্য রপ্তানিতে ৭ শতাংশ, ১২ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ প্রণোদনার পরিবর্তে ইয়ার্ন ও টোয়াইন এবং হেসিয়ান,  সেকিং ও সিবিসির জন্য ২০ শতাংশ ও  বহুমুখী পাটপণ্যের জন্য ২৫ শতাংশ হিসেবে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি, রপ্তানির বিপরীতে প্রণোদনার ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর রহিতকরণ, অন্যান্য শিল্প খাতের ন্যায় পাটশিল্প খাতের সমুদয় ব্যাংক ঋণ মওকুফ, কৃষকদের জন্য উচ্চফলনশীল পাট বীজ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, কাঁচাপাট উৎপাদন, ব্যবহার ও রপ্তানি বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যান প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

পাটশিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, কাঁচাপাটের ওপর ২ শতাংশ উৎসে কর আরোপ করায় সেটি বাংলাদেশের কৃষক ও কাঁচা পাট ব্যবসায়ীদের ওপর পড়েছে; ফলে কৃষকরা পাট উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হওয়ার পাশাপাশি পাট উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন বক্তারা। এ সময় দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০-এর শতভাগ বাস্তবায়ন ও পলিথিনের ব্যবহার নিশ্চিতকরণের দাবি জানান বক্তারা।

বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মো. আবুল হোসেন বলেন, পাটশিল্পে স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান করা হলে মিল মালিকরা চিরাচরিত পাটপণ্যের সঙ্গে বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হবে এবং স্বল্প মূল্যে দেশে ও বিদেশের বাজারে পাটপণ্য ও বহুমুখী পাটপণ্য বিক্রি-রপ্তানি বাড়াতে সচেষ্ট হবে।

এ সময় এফবিসিসিআই’র পরিচালক মো. হাবিব উল্লাহ ডন, পরিচালক আজিজুল হক, নিয়াজ আলী চিশতি, ফখরুস সালেহীন নাহিয়ানসহ বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ডাইভারসিফাইড জুট গুডস প্রডিউসারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনএসডিএ) এবং বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বাংলাক্রাফ্ট) নেতারা উপস্থিত ছিলেন।