Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 9:03 pm

পাটের হাটে উদ্ভাবনী ছোঁয়া

এবারও ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। সরকারি পাটকলগুলোর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিজেএমসি পেয়েছে একটি সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন  ‘প্যাভিলিয়ন নম্বর-২’-এ। বিজেএমসির প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ঐতিহ্যবাহী পাটপণ্যের পাশাপাশি নানা উদ্ভাবনী পণ্যের সমাহার। এ প্রতিষ্ঠানের অধীনস্থ বিশেষায়িত কারখানাগুলো এখানে আলাদা পণ্য ও প্রযুক্তি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছে।

সূত্রমতে, বিজেএমসির অধীনে ২৬টি পাটসংশ্লিষ্ট কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ২৩টিতে প্রচলিত পাটপণ্য অর্থাৎ চট, বস্তা ও পাটের সুতা উৎপাদন, বিপণন ও রফতানি হয়। তবে আরও তিনটি পাটকলে উৎপাদিত হয় বিশেষায়িত নানা পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে জুটো-ফাইবার গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি, গলফ্রা হবিব মিলস প্রভৃতি। এছাড়া পাটের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে নানা ধরনের নতুন পণ্য তৈরির চেষ্টা করছে সাধারণ পাটকলগুলোও।

প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বিজেএমসির বিভিন্ন পাটকলে প্রস্তুতকৃত প্রচলিত পাটের বস্তার প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে এক প্রান্তে। সেখানে খাদ্যপণ্য প্যাকেজিংয়ের কাজে বাধ্যতামূলক পাটপণ্য ব্যবহার আইন-২০১০-এর বিষয়ে সচেতনতার জন্য প্রচারণা চালানো হয়েছে। ওই কাজে যে ১৭টি পণ্যের মোড়কে পাটপণ্য ব্যবহার জরুরি, সেগুলোর নমুনাও প্রদর্শন করা হয়েছে। পাশাপাশি পাটকল মেশিনের প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

প্যাভিলিয়নের অন্য প্রান্তে দেখা গেছে ইনোভেশন কর্নার। এখানে চারকোল বা পাটখড়ি থেকে কীভাবে ভিসকস বা উন্নতমানের সুতা তৈরি করা হয়, তার প্রদর্শনী করা হয়েছে। পাশে রাখা আছে পাটের তৈরি পলিব্যাগ। ‘সোনালি ব্যাগ’ নামের এ নতুন পণ্যটি দেখতে একেবারে পলিথিনের মতো স্বচ্ছ। এখানে কর্তব্যরত বিজেএমসির ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) মো. জাকির হোসাইন জানান, রাজধানীর ডেমরায় অবস্থিত লতিফ বাওয়ানি জুটমিলে এ পলিব্যাগ তৈরি হচ্ছে। ব্যাগগুলো সাধারণ পলিব্যাগের চেয়ে টেকসই ও বেশি ভার বহনে সক্ষম। তবে এখনও এর বাণিজ্যিক বিপণন শুরু হয়নি। দু’এক মাসের মধ্যে এটি বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া পাট থেকে তৈরি ডেনিম বা জিন্সের পণ্যও প্রদর্শন করা হচ্ছে।

মেলায় দেখা গেছে বিজেএমসির প্রতিষ্ঠান জুটো-ফাইবার গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের আলাদা কর্নার। ওই কারখানায় পাটদ্রব্যের সঙ্গে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিন, বেসিন, কমোড, বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল প্রভৃতি তৈরি করা হয়। সেসব পণ্যেরও প্রদর্শনী হচ্ছে মেলায়। ওই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের অর্ধশতাধিক হাসপাতাল, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এসব পণ্য ব্যবহার করছে, যার স্থায়িত্ব ৩০ বছরের বেশি। কর্মকর্তারা জানান, কাঠের বিপরীতে এ পণ্য তৈরিতে পাটের কাপড়ের সঙ্গে ব্যবহার করা হয় পাটের তৈরি চটের সঙ্গে উন্নতমানের গ্লাস ফাইবার, রেজিন ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি। এসব আসবাব কাঠের মতো বেঁকে যায় না বা ঘুণে ধরে না। পানিতেও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিজেএমসি কয়েক বছর ধরে জানিয়ে আসছে যে, পাটপাতা থেকে চায়ের মতো বিশেষ ধরনের স্বাস্থ্যকর পানীয় উৎপাদন ও বাজারজাত সম্ভব। এবার মেলায় তা বাজারে এনেছে বিজেএমসি। দুটি ফ্লেভারে পাটপাতার পানীয় প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হচ্ছে বাণিজ্যমেলায়।

 

জাকারিয়া পলাশ