১৯৬৭ সালে নরসিংদীর পলাশে জনতা জুট মিলসের যাত্রা। প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আলহাজ মোজাম্মেল হক। দেশের ঐতিহ্যবাহী পাট ও পাটজাতপণ্য টিকিয়ে রাখতে তাদের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি ছিল না, আজও নেই। শুরুতে একটি কারখানা দিয়ে উৎপাদনে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ কারখানায় উৎপাদিত কাপড়, ব্যাগ ও বস্ত্রের পরিমাণ ৯ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। ১৯৮৫ সালের মধ্যে তারা আরও একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। এখানে তিন হাজার ৪০০ টন সুতা উৎপাদন হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। ক্রমান্বয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি শুরু করে এ প্রতিষ্ঠান।
সেই একই বছর অর্থাৎ ১৯৮৫ সালে কুমিল্লার দেবিদ্বারে সাদাত জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লি. প্রতিষ্ঠা করে জনতা। পরের বছর সাদাত জুট ইন্ডাস্ট্রিজের একটি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে বর্তমানে চার হাজার ৩০০ টন সুতা প্রস্তুত হয়। ১৯৯৪ সালে আরও একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করে সাদাত। এ কারখানায় উৎপাদিত সুতার পরিমাণ প্রায় আট হাজার টন। ২০০১ সালে সাদাত জুট ইন্ডাস্ট্রিজের আরও একটি কারখানা তৈরি করা হয়।
১৯৯৬ সালে তৃতীয় কারখানা গড়ে তোলে জনতা জুট মিলস। এ কারখানায় উৎপাদন হয় প্রায় পাঁচ হাজার ৬০০ টন সুতা। গুণগত মানের কারণে তাদের পণ্যের সুনাম রয়েছে। ফলে পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে ২০০০ সালে আরও একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করে তারা। ছয় হাজার ৭০০ টন সুতা উৎপাদন হয় এখানে। চার বছর পর হেসিয়ান ফেব্রিকস তৈরির জন্য একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। এখানে চার হাজার ৮৫০ টন ফেব্রিকস উৎপাদন হয়। ২০০৮ সালে ফেল্ট তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করে জনতা জুট মিলস। এখানে উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ ৫০০ টন। ২০১৬ সালে নিজস্ব বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে প্রতিদিন ১০ মেট্রিক টন বর্জ্য শোধন করা হয়।
বছরে প্রায় ৩২ হাজার মেট্রিক টন সুতা রফতানি করে এ প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে ১৭ হাজার মেট্রিক টন ওভেন ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করে তারা।
জনতা জুট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হক। তিনি সাদাত জুট ইন্ডাস্ট্রিজে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনেরও চেয়ারম্যান তিনি। গোল্ডেনম্যান হিসেবে দেশ-বিদেশে তার সুনাম রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের প্রায় সব দেশসহ বিশ্বের ১২১টি দেশে রফতানি হয় তাদের পণ্য।
করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সমাজের জন্য অনেক কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মীদের আবাসন সুবিধা দেখে থাকে এ প্রতিষ্ঠান। তাদের প্রতিষ্ঠানে একটি মেডিক্যাল সেন্টার রয়েছে। এখানে দুজন আবাসিক ডাক্তার নিয়মিত রোগী দেখে থাকেন। লায়ন্স ক্লাবের সঙ্গে যৌথভাবে ২০০৮ সালে কারখানা চত্বরে আই ক্যাম্পের আয়োজন করে তারা। ২০১১ সালে তারা প্রাইমারি ডেন্টাল কেয়ার ক্যাম্পের আয়োজন করে। জনতা আদর্শ বিদ্যাপীঠ নামে একটি স্কুল নির্মাণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মীদের সন্তানসহ স্থানীয় শিক্ষার্থীরা এখানে পড়ালেখা করে। এ বিদ্যালয়ের সাফল্য ব্যাপক। ২০০৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে নবম সেরা বিদ্যালয়ের তকমা পায় এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মোজাম্মেল হক দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেন। তিনি নরসিংদীর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য ২০ মিলিয়ন টাকার তহবিল গঠন করেন। এছাড়া জনতা আদর্শ বিদ্যাপীঠের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান শুরু করেন। ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে পাস করা সেরা তিন ছাত্রের জন্য বৃত্তি প্রদান করে তারা। প্রতিষ্ঠান থেকে আয়ের মোট লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ কর্মীদের জন্য বরাদ্দ রাখে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৪ সালে কর্মী মঙ্গল তহবিল গঠন করেছে জনতা জুট মিলস।
অর্জন
১৯৯০ সাল থেকে ২০ বার ন্যাশনাল এক্সপোর্ট অ্যাওয়ার্ড নিজেদের করে নিয়েছে জনতা ও সাদাত। এর মধ্যে গোল্ড ১৯৯৯-০০, ২০০০-০১, ২০০১-০১, ২০০৪-০৫, ২০০৫-০৬, ২০০৬-০৭, ২০১০-১১; সিলভার ১৯৯৪-৯৫, ১৯৯৮-৯৯, ২০০২-০৩, ২০০৭-০৮, ২০০৮-০৯, ২০১১-১২, ২০১২-১৩; ব্রোঞ্জ ১৯৯০-৯১, ১৯৯১-৯২, ১৯৯৬-৯৭, ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১২-১৩ সালে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের ‘এক্সপোর্টার অব দ্য ইয়ার-২০০২’ অর্জন করেছে এ প্রতিষ্ঠান। পেয়েছে সিলন ন্যাশনাল চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের ‘সিএনসিআই অ্যাসিভার অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডস ২০০৫’। ২০০৫ ও ২০০৬ সালে পরপর দুবার বাংলাদেশ সরকারের জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের ‘বেস্ট প্রডিউসার অব জুট ডাইভারসিফায়েড প্রডাক্ট ট্রফি’ সম্মানে ভূষিত হয়েছে। ২০১১ সালে এইচএসবিসি এক্সপোর্ট অ্যাকসিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি।
Add Comment