পাট শাকের দুটি নতুন জাত উদ্ভাবন

তানিউল করিম জীম, বাকৃবি: শাক বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি জাতীয় খাদ্য। ভাতের সঙ্গে ডাল ও শাক বেশ প্রচলিত একটি খাদ্যাভ্যাস। এবার সেই শাকের সঙ্গে যুক্ত হলো পাট শাকের আরও দুটি নতুন জাত। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) কর্র্তৃক সদ্য অবমুক্তকৃত-বিজেআরআই দেশি পাটশাক-২ (ম্যাড়া লাল) ও বিজেআরআই দেশি পাট শাক-৩ (ম্যাড়া সবুজ)। দীর্ঘ পাঁচ বছরের গবেষণায় জাত দুটি উদ্ভাবন করেন বিজ্ঞানী মো. জ্যাবলুল তারেক। বুনো পাট থেকে শাকের এ দুটি জাত উদ্ভাবন করা হয়।

জানা যায়, স্বাদে তিতাহীন বলে এটি অধিক সুস্বাদু ও সুুমিষ্ট। প্রচুর পুষ্টিগুণ-সম্পন্ন হওয়ায় মানুষের শাকের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহয়তা করবে। শাকটি মালভেসিয়া পরিবাবের অন্তর্ভুক্ত, যার বৈজ্ঞানিক নাম ঈড়ৎপযড়ৎঁং পধঢ়ংঁষধৎরং। পুষ্টিমান বিবেচনায় ম্যাড়া পাটশাকে অন্যান্য পাটশাকের চেয়ে গড়ে প্রায় দেড়গুণ পরিমাণ বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে।

অন্যান্য পাটশাকে যেখানে গড়ে ক্যালসিয়াম (১.৭৭%), পটাশিয়াম (১.৫৭%), আয়রন (১১৬৮.৫ মিলিগ্রাম/কেজি), প্রোটিন (২২.৭৫%), ভিটামিন-এ (১০৫.৭০ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম) এবং ভিটামিন-সি (৬৫.৭৯ মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম); সেখানে ম্যাড়া দু’টি জাত পাটশাকে গড়ে প্রায় দেড়গুণ ক্যালসিয়াম (২.১৫%), পটাশিয়াম (১.৬৪%), আয়রন (৭৯০.৫ মিলিগ্রাম/কেজি), প্রোটিন (২০.৫০%), ভিটামিন-এ (১২৬.৪৫ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম) এবং ভিটামিন-সি (৭৫.১৭ মিলিগ্রাম/১০০ গ্রাম) বিদ্যমান।

এ সম্পর্কে গবেষক মো. জ্যাবলুল তারেক বলেন, দীর্ঘদিন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বাস্তবায়নাধীন পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা প্রকল্পে চাকরির সুবাদে প্রায়ই বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে গবেষণা মাঠ পরিদর্শন কিংবা মাঠ দিবস সুসম্পন্ন করতে বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার সময় এক ধরনের বুনো পাট দেখতে পেতাম। রংপুরের তৎকালীন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আইয়ুব খানের পরামর্শ নিয়েই গবেষণা শুরু করি।

তিনি বলেন, এ বুনো পাট থেকে উন্নতমানের আঁশ পাওয়া যায় কিনা সেটাই ছিল আমার গবেষণা লক্ষ্য। দেখা গেল, বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই শাখা-প্রশাখায় ঝোপালো হয়ে ফুল-ফল আসতে শুরু করে। ফলে এ জাত থেকে কোনো লাভজনক আঁশ পাওয়া সম্ভব হয় না। তবে ওই প্রকল্পের আওতায় শাক হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে নতুন করে গবেষণা চলতে থাকে। তিন বছর ধরে গবেষণার পর এটি তিতাহীন সুস্বাদু সুমিষ্ট শাকের ন্যায় সকল পুষ্টিগুণ ও বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় অতি সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ম্যাড়া লাল ও ম্যাড়া সবুজ লাইন দুটি শাকের জাত হিসেবে অনুমোদিত হয়।

এ কাজে বিশেষভাবে সহযোগিতা করেন প্রতিষ্ঠানের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, ড. মো. আইযুব খান, ড. মো. সামিউল হক এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আবুল ফজল মোল্লা, ড. মো. শহিদুল ইসলাম। গবেষণালব্ধ উপাত্ত বিজেআরআইয়ের প্রজনন বিভাগ কর্তৃক উপস্থাপনের মাধ্যমে জাত দুটি পাটের শাক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এছাড়া পুষ্টিমান ও অন্যান্য তথ্যসম্বলিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস গ্রুপের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ভেজিটেবল সায়েন্স’-এ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।   

তিনি আরও বলেন, এটি সব ধরনের জমিতে প্রায় সারা বছর চাষ করা যায়। এমনকি এটি অল্পমাত্রার লবণাক্ত এলাকাতেও আবাদ করা সম্ভব। পোকামাকড় ও রোগবালাই কম হয় বলে ভালোভাবে পরিচর্যা করলে ঝোপালো এ শাকগাছ থেকে কয়েকবার শাকপাতা সংগ্রহ করা সম্ভব। এন্টি-অক্সিডেন্ট ও ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান এবং পরিমাণ নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০