পানগাঁও টার্মিনালে অনিয়ম অবসানে ব্যবস্থা নিন

‘পানগাঁওয়ে পণ্য ছাড়াতে লাগে ৫৬ দিন, রয়েছে সিন্ডিকেট’ শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, সেটিকে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের দৃষ্টান্ত নয় বলেই ধারণা। তথ্য মতে, পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালে (পিআইসিটি)  ২০২২-২৩ অর্থবছর গড়ে ৯ থেকে ১০ শতাংশ বিল অব এন্ট্রি অসত্য বা ঘোষণাবহির্ভূত পণ্যের। এ বন্দরে পণ্য ও কনটেইনার পরিবহনে ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সিন্ডিকেট সক্রিয়। বন্দরটিতে জাহাজ ভাড়া বেশি, শিডিউল করা অনেক জাহাজ আসে না; জাহাজ না এলে ব্যবস্থাও নেয়া হয় না। ঘুষ আর হয়রানি তো আছে। এছাড়া বন্দরের দেয়া স্ক্যানার কাস্টমস ব্যবহার করে না।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা বন্দরটি পরিদর্শন করেছে। তিনি এ বন্দরকে সচল করার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। বন্দরকে সচল করার আগে বিদ্যমান অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধের লক্ষ্যে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেই আমরা আশাবাদী।

ইউরোপ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত একটি কনটেইনার পরিবহনে ভাড়াসহ যে খরচ হয়, তার চেয়ে বেশি খরচ হয় চট্টগ্রাম থেকে পানগাঁও রুটে, যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২৮৭ ডলারের বেশি।  অথচ মন্ত্রণালয় থেকে জাহাজের ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটে হ্রাসকৃত ভাড়া চালু করলে শিপিং এজেন্টগুলো পানগাঁও বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে আগ্রহী হবে। এ রুটে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিবন্ধিত অনেক জাহাজই পানগাঁও রুটে চলাচল করে না। তাই জাহাজের নাম উল্লেখপূর্বক ফিক্সড শিডিউল ঘোষণা করা প্রয়োজন। এ রুটে অনেক জাহাজের ফিটনেস এবং পিঅ্যান্ডআই ইন্স্যুরেন্স নেই। ব্যবসায়ী এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের অনেকে চলাচলে অযোগ্য এ ধরনের জাহাজের নিবন্ধন বাতিল করার পক্ষপাতী। যে জাহাজের নামে শিডিউল ঘোষণা করে, কিন্তু শিডিউলে যে জাহাজটির নাম রয়েছে, সেটির বন্দরে আসার নিয়ম করতে হবে। একই মালিকের অন্য জাহাজ  এলে তা অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটাবে। শিডিউলভুক্ত যেসব জাহাজ শিডিউল লঙ্ঘন করবে, সেসব জাহাজের মালিকের ওপর জরিমানার মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে সবাই নিয়ম মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ হবে।

সরকার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পানগাঁও টার্মিনালটি প্রতিষ্ঠা করেছে। আইসিডি কমলাপুর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হ্রাসকৃত ট্যারিফ ঘোষণা করে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে ওই আইসিডি ধারণক্ষমতার বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে আসছে। এক্ষেত্রে এটির ট্যারিফ চট্টগ্রাম বন্দরের সমপর্যায়ে নিয়ে আসাটা সময়ের চাহিদা। নদীপথে কনটেইনারের ভাড়া অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমের ভাড়ার চেয়ে কম হওয়ার কথা। এসব বিবেচনায় নৌপরিহন প্রতিমন্ত্রী পানগাঁও টার্মিনালকে পণ্য ও কনটেইনার পরিবহনের সিন্ডিকেটের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন কাস্টম স্ক্যানারটি কাস্টম ব্যবহার না করায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ব্যবসা সহজীকরণের জন্য জাহাজের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজের নাম উল্লেখ করে ফিক্সড শিডিউল ঘোষণা ও কাস্টমসের স্ক্যানার ব্যবহার করার উদ্যোগ নেয়া হলে অচিরেই পিআইসিটিতে অনিয়ম ও জটিলতার অবসান ঘটবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০