Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 11:06 am

পানামা পেপারসের অপারেশন কার ওয়াশ থেকে দায়মুক্তি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: পানামা পেপারস ও অপারেশন কার ওয়াশ কেলেঙ্কারি-সংশ্লিষ্ট মামলা থেকে অর্থপাচারে অভিযুক্ত ২৮ ব্যক্তিকে খালাস দিয়েছেন পানামার একটি আদালত। এই ২৮ জনের বিরুদ্ধে আরোপিত সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক বালোসিয়া মারকিনেজ। অপারেশন কার ওয়াশ ব্রাজিলের রাষ্ট্রীয় তেল গ্যাস কোম্পানি পেট্রোবাস নিয়ে দুর্নীতির তদন্ত। খবর: সিএনএন। খালাস পাওয়া ২৮ ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে মারকিনেজ বলেছেন, প্রক্রিয়া চলাকালে একটি গোষ্ঠী ধ্বংস হয়ে গেছে।

পানামা পেপারস হলো ১১ মিলিয়ন বা এক কোটি ১০ লাখের বেশি ফাঁস হওয়া নথির একটি সংকলন, যা ২০১৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট (আইসিজে) প্রকাশ করে। নথিগুলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সহযোগীদের নিয়ে তৈরি একটি গোপন নেটওয়ার্ক ও ফিফার নীতি কমিটির এক সদস্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ হিসেবে ঘোষিত ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকার কথা প্রকাশ করেছিল। গোপনীয়তা রক্ষাকারী হিসেবে স্বীকৃত পৃথিবীর অন্যতম প্রতিষ্ঠান মোস্যাক ফনসেকা, যেটি পানামার একটি আইনি প্রতিষ্ঠান, সেখান থেকেই এই নথিপত্র ফাঁস হয়েছে। মক্কেলদের পরামর্শ বাবদ তারা বার্ষিক ফি গ্রহণ করে। বিশ্বের ৪২টির বেশি দেশে প্রতিষ্ঠানটির শাখা রয়েছে। এসব শাখায় কর্মরত রয়েছেন ৬০০ কর্মী।

নথিগুলোয় ১২ জন বর্তমান ও সাবেক বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি অন্যান্য ১২৮ রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এটা ২০১০ সালে উইকিলিকসের ফাঁস করা নথির চেয়েও বেশি। ২০১৩ সালে সাংবাদিকদের কাছে এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা নথির চেয়েও এ সংখ্যা বেশি। মোস্যাক ফনসেকা’র অভ্যন্তরীণ ডেটাবেজ থেকে ফাঁস হয়েছে ১১ দশমিক ৫ মিলিয়ন নথি এবং ২ দশমিক ৬ টেরাবাইট তথ্য।

ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে দেখা যায়, কীভাবে গোপনীয়তার আড়ালে ল’ ফার্মটি বিশ্বনেতাদের অর্থপাচার, নিষেধাজ্ঞা এড়ানো এবং কর ফাঁকিতে সহযোগিতা করেছে। এতে আরও উঠে এসেছে, স্বৈরশাসকসহ বিশ্বের সাবেক ও বর্তমান ৭২ রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের নিজেদের দেশ থেকে অর্থ লোপাটের ভয়াবহ চিত্র। তবে মোস্যাক ফনসেকা বলছে, কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই তারা ৪০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে।

গ্রাহক আকৃষ্ট করতে ব্যবসায়িক সহযোগীদের নিজেদের ব্র্যান্ড নাম ব্যবহারের সুযোগ দেয় মোস্যাক ফনসেকা। এ প্রতিষ্ঠানটি সুইজারল্যান্ড, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসসহ বিভিন্ন স্থানে ট্যাক্স হ্যাভেন পরিচালনা করে। নিজ দেশের বাইরে অর্থ রাখার বিষয়ে দুনিয়াজুড়ে যেসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের সেবাদান করে, সেগুলোর মধ্যে মোস্যাক ফনসেকার অবস্থান চতুর্থ। তিন লাখের বেশি কোম্পানির সঙ্গে তারা কাজ করে। যুক্তরাজ্যে তাদের বেশ মজবুত অবস্থান রয়েছে।

এই ডেটা ফাঁসের বিষয়ে বিশদ আলোচনায় যেতে আগ্রহী নয় মোস্যাক ফনসেকা। গ্রাহকের গোপনীয়তার রক্ষার দিকেই অধিক নজর তাদের। মোস্যাক ফনসেকা বলছে, তারা মানিলন্ডারিংবিরোধী আইন মেনে চলেছে। সেদিকে খেয়াল রেখেই তারা ক্লায়েন্টদের সেবা দিয়েছেন। নিজেদের সেবার যেকোনো ধরনের অপব্যবহার রোধে তারা সচেষ্ট ছিলেন।

পেশ করা প্রমাণাদির সত্যতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আদালতের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলার প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়নি। গত শুক্রবার আইসিজের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জেরার্ড রাইল বলেন, আদালত বিবাদীদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিলেও তদন্ত প্রক্রিয়ার একটি স্থায়ী প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।

রাইল বলেন, পানামা পেপারসের মতো লুকানো সত্য উšে§াচন করে আমরা জনগণকে দায়বদ্ধতা ও পুনর্জাগরণের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য সরবরাহ করেছি। আইসিজে জানিয়েছে, ৮৫ ঘণ্টা স্থায়ী হওয়া বিচার প্রক্রিয়ায় তিন প্রসিকিউটর ও ১৮ ডিফেন্স আইনজীবী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আদালতের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, অপারেশন কার ওয়াশ থেকে ওই ব্যক্তিদের অব্যাহতি
দেয়ার কারণ হলো শুনানিতে অবৈধ উৎস থেকে তাদের আয় সম্পর্কে উপযুক্ত প্রমাণ পেশ করা হয়নি।