Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:55 pm

পানির উৎপাদন কমছে সাড়ে ৬ কোটি লিটার

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মহানগরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ব্যবহারের পানির প্রতিদিনের মোট চাহিদা ৫০ কোটি লিটার। এর বিপরীতে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রায় ৪০ থেকে ৪৩ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে। সরবরাহকৃত পানির পরিমাণ দিনে দিনে কমছে। পাশাপাশি ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আগামী কয়েক মাসে লবণের মাত্রা বাড়বে এবং পানির সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে নগরের বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ওয়াসার পানির উৎস হলো হালদা ও কর্ণফুলী নদী। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ভাটার সময় নদী থেকে পানি নেয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া জোয়ারের সময় লবণাক্ততা বেড়ে যায়। এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য ওয়াসার কাছে বিকল্প কোনো উৎস নেই। এ কারণে মদুনাঘাটের শেখ রাসেল ও মোহরা পানি শোধনাগারের চার কোটি লিটার এবং রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী শেখ হাসিনা পানি শোধনাগারের পানি উৎপাদন আড়াই কোটি লিটার কমেছে। অর্থাৎ এখন দৈনিক সাড়ে ছয় কোটি লিটার পানির উৎপাদন কমে গেছে। ফলে নগরীতে রেশনিং করে পানি সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, কাপ্তাই লেকে পানির স্তর কমে যাওয়ায় পানি ছাড়া হচ্ছে না। এতে জোয়ারের সময় হালদার অনেক ভেতরে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ছে। আবার ভাটার সময় হালদা ও কর্ণফুলীতে পানির স্তর কমে গেলে পর্যাপ্ত পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এসব কারণে ওয়াসার পানি সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

ওয়াসার কর্মকর্তারা বলেন, কাপ্তাই লেকে স্বাভাবিক অবস্থায় সর্বোচ্চ পানি থাকে ১০৯ ফুট, যা মার্চে থাকার কথা ৯২ ফুট। কিন্তু বর্তমানে পানির স্তর কমে ৮২-৮৩ ফুটে নেমে এসেছে। লেকে পানির স্তর কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। কাপ্তাই লেক থেকে পানি না ছাড়ার কারণে হালদায় লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। এতে নগরবাসীর সমস্যা হচ্ছে। এই সংকট নিরসনে ওয়াসা কিছু গভীর নলকূপ চালু করছে।

ওয়াসার পানি ব্যবহারকারী ও গবেষকরা বলেন, গত মাস থেকে লবণাক্ততার সমস্যায় পড়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা। আসন্ন চৈত্র ও বৈশাখে বৃষ্টি না হলে কাপ্তাই লেকের পানির প্রবাহ কমে জোয়ারের সঙ্গে সাগরের লোনা জল কর্ণফুলী ও হালদায় প্রবেশ করবে। এতে লবণাক্ততার মাত্রা আরও বাড়বে। এ সময় পানির উৎপাদনও কমবে। এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে ওয়াসার কাজ শুরু করা উচিত বলে তারা জানান।

পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা শাহেদ আলম বলেন, ওয়াসার পানি সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কমে এসেছে। নতুন করে যোগ হয়েছে লবণাক্ততা। এভাবে বছরের পর বছর ধরে আমরা পািন নিয়ে কষ্ট পাচ্ছি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততার সমস্যা একটি প্রকৃতিক সমস্যা। লবণাক্ততার কারণে পানির উৎপাদন প্রায় সাড়ে ছয় কোটি লিটার কমেছে। বিশেষ করে কাপ্তাই লেকের পানির স্তর বেশি নিচে নেমে গেছে। আমরা এখন রেশনিং করে পানি সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এলাকা ভাগ করে এক দিন পরপর পানি সরবরাহ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমরা পানি সংগ্রহের বিকল্প পয়েন্ট নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে একটি স্টাডি শেষ করেছি। একটি ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে জমা করেছি। আমাদের ডোনাররা যাচাই-বাছাই করে ফিডব্যাক দিলে কাজ শুরু করতে পারব।

উল্লেখ্য, ওয়াসা চট্টগ্রাম নগরবাসীর চাহিদার ৮৫ শতাংশ পানি সরবরাহ করে। বাকি চাহিদা পূরণে আরও তিনটি পানি সরবরাহ প্রকল্প চলমান। এ তিনটি প্রকল্প শেষ হলে চট্টগ্রাম মহানগর শতভাগ পানি সরবরাহের আওতায় আসবে।