আবু সাঈদ সজল: গোলাভরা ধান। গোয়ালভরা গরু। পুকুরে মাছের খুনসুটি। বাজারে লোক সমাগম। এমনি একটি আদর্শ গ্রাম ডিক্রিরচর। বরিশালের হিজলা থানার মেমানিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত গ্রামটির সব ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু গত বুধবার থেকে পানির সঙ্গেই বসবাস করছে এ গ্রামের মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে হঠাৎ করেই পানি বেড়ে যায়। স্রোতের সঙ্গে দ্রুত গতিতে পানি বেড়ে ডুবে গেছে পুরো গ্রাম। পুকুরের মাছ, ফসলসহ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব অনেকেই।
মাথার ওপরে শুধু আকাশটাই শূন্য নয়, এ বয়সে রহিমা বেগমের যেন সবকিছুই শূন্যের ঘরে। মেঘনা নদীর পাড়ে বাড়ি হওয়ায় সাধের ঘর, ফসলি জমিসহ প্রকৃতি তার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। তার চোখজুড়ে এখন পানি আর স্রোত। সব হারিয়ে চোখের জলও হারিয়ে গেছে। শুধু ফ্যাল-ফ্যাল করে নির্বাক চাহনি। কে দেবে সাহায্য, সেই চাওয়াটাও যেন হারিয়ে গেছে। একদিকে করোনার প্রকোপ, অন্যদিকে ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। লাখ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে ফসলের।
শুধু রহিমাই নন, এমন দুঃসহ জীবনের গল্প এখন ডিক্রিরচরসহ তার পার্শ্ববর্তী মেঘনার কোলঘেঁষে আবুপুর গ্রামের অনেক ঘরেই। ৭০ বছর বয়সি আবদুর রহমান বলেন, বন্যায় সব ডুবে গেছে। কোথাও থাকার জায়গা নেই। অনেক কষ্টে দিন পার করছি।
আবদুর রহমান আরও বলেন, ‘১৯৯৮ সালের পর এমন বন্যা আর দেখিনি, সব পানিতে ভাইসা গেছে। একদিকে বন্যার পানিতে ডুবে আছি, অন্যদিকে করোনায় ক্ষতি। আমাদের গরিবের এখন উপায় কী?’
জানা গেছে, বন্যার কারণে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে নি¤œাঞ্চলের রাস্তাঘাট, হাটবাজার, বাসাবাড়ি ও স্কুলে জোয়ারের পানি ঢুকে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে পুকুর ও ঘেরের মাছসহ কয়েকশ’ হেক্টর ফসলি জমির বীজতলা তলিয়ে গেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাসাবাড়ি, গ্যারেজ ও দোকানে পানি ঢুকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। রাস্তাঘাট তলিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া মেঘনা নদীর পানি ১১৪ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্রবল স্রোতে নদীভাঙনে ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার সর্বত্র পানিতে ডুবে আছে। পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ। গবাদি পশুগুলো নিয়েও বিপাকে তারা। আর যাতায়াতে নৌকাই যখন একমাত্র অবলম্বন তাদের। নদীতে অতিরিক্ত স্রোতের কাছে অসহায় জেলেরাও। পানি থেকে কবে মিলবে মুক্তি সেদিকে চেয়ে সবাই।