সাইফুল আলম ও সাঈদ সবুজ: চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৮ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) প্রায় এক হাজার ৬২০ কোটি টাকার প্রকল্প দেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় খাল থেকে মাটি উত্তোলন ও রেগুলেটর নির্মাণ, ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ, নদীতীরে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণসহ নালা-নর্দমা তৈরিসহ নানা কর্মকাণ্ড রয়েছে। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু গত তিন বছরেও প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। এর মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল কোরকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, নগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় পাউবো একটি প্রকল্প হাতে নেয়, যা একনেকে পাস হয়। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু গত তিন বছরে এর কাজ শুরু হয়নি। পদে পদে প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর কিছু কাজ কর্ণফুলী কেন্দ্র করে। বন্দরের এলাকায় এসব কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। তারা বলেছেন, নেভাল একাডেমি থেকে বন্দরের ১৫ নম্বর ঘাট পর্যন্ত নদীর পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ ও ১৫ নম্বর ঘাট থেকে বন্দর পর্যন্ত এবং বন্দর এলাকা বাদ দিয়ে বাংলাবাজার থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত ফ্লাড ওয়াল নির্মাণেও আপত্তি রয়েছে বন্দরের। নদীতে এসব কাজের কেমন প্রভাব পড়বে তা নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে। অপরদিকে প্রকল্পটির আওতায় কর্ণফুলীতে পড়া ৩২টি খালে রেগুলেটর নির্মাণ করার কথা থাকলেও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) আটটি রেগুলেটর নির্মাণ শুরু করেছে। জানা গেছে, চউক আরও চারটি রেগুলেটর ও বোট পাসের কাজ করবে।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বন্দরের আপত্তির কারণে রিটেইনিং ওয়াল ও ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ সম্ভব নয়। তাছাড়া রেগুলেটর নির্মাণের কাজ কমে গেলে ও আউটার রিং রোডের নিচ দিয়ে সমুদ্রে পড়া খালগুলোর মুখে রেগুলেটর নির্মাণের কাজ প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হলে এ প্রকল্পের অনেক কাটছাঁট হবে।
বন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, নদীর ওপর কিছু করার জন্য সতর্কতার বিকল্প নেই। কারণ নদী অনেক সংবেদনশীল। কোনো পদক্ষেপে নদীর ক্ষতি হবে কি না, চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে কি না, সিলটেশন বা পলিমাটি ভরে জমাট হচ্ছে কি না প্রভৃতি দেখতে হবে। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষ আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পরামর্শ দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী বলেন, একই প্রকল্প চউক বাস্তবায়ন করছে। সেখানে আবার পানি উন্নয়ন বোর্ডও একই কাজ করবে। এটা কীভাবে সম্ভব? বিষয়টি খুবই অপরিপক্ব। অথচ একদিকে টাকার অভাবে প্রকল্প ঝুলে যাচ্ছে, অপরদিকে আরেক প্রকল্প বাস্তবায়নে টাকা খরচ করা যাচ্ছে না। সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে এমন সংকট তৈরি হতো না।
পাউবোর নির্বাহী পরিচালক তনয় কুমার ত্রিপুরা শেয়ার বিজকে বলেন, ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় পুরোদমে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এসব নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষসহ নানা সংস্থার বেশ কযেকবার মিটিং হয়েছে। সর্বশেষ এ প্রকল্পটি সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে। আর এ প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত ২০ কোটি টাকাও ছাড় হয়নি। তিনি আরও বলেন, কর্ণফুলি দখল ও দূষণরোধে অবশ্যই নদীর পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল তুলে দেয়া দরকার। এতে কর্ণফুলীর আয়তন নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি দখলও বন্ধ হবে। এছাড়া প্রস্তাবিত পতেঙ্গায় বেটার্মিনাল এলাকায় আমাদের রিটেইনিং ওয়াল দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বন্দরের টার্নিনাল নির্মাণের কারণে তাও সম্ভব হয়নি। আসলে বন্দর এলাকা বেশ সেনসেটিভ। অথচ আমাদের এ প্রকল্পটি ২০১৩-১৪ সালের দিকে নেয়া।