Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 1:24 pm

পানি কমলেও ফের ভাঙছে তিস্তা

ফারুক আলম, লালমনিরহাট: উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতে গত কয়েকদিন লালমনিরহাটের তিস্তায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এতে  নি¤œাঞ্চল ও তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শনিবার সকাল পর্যন্ত প্লাবিত অঞ্চলে কোমর পরিমাণ ছিল পানি। এরপর থেকে পানি কমতে থাকে। রোববার সকালে পানি কমে যায়। পানি কমলেও ভেসে ওঠে পলি-বালিপড়া আমনক্ষেত। হঠাৎ বন্যার এ পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। ভাঙনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে সদর উপজেলার চর গোকুন্ডায়। এছাড়া নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চলে লাগানো রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাঁটু সমান কাদা-পলিতে ডুবে গেছে আমনের ক্ষেত।

স্থানীয়রা মনে করছেন, এমন অবস্থায় থাকলে আগামী ৬ মাস খাবার সংকটে পড়বে চরাঞ্চলের এসব মানুষ। কৃষি বিভাগ বলছে, এবারের বন্যায় জেলায় সরকারি হিসাবে ৩৯৫ হেক্টর আমনক্ষেত ডুবে গেছে। নতুন কোনো ফসল চাষ করতে পারছে না। যাই রোপণ করছে, ঘন বৃষ্টি বানে খেয়ে নিচ্ছে।

এদিকে নদীভাঙন রোধে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে তীররক্ষা বাঁধ। এতে সুফল মিলবে হাজারো পরিবারের। তবে, বাঁধ নির্মাণে ধীরগতি থাকায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

মোজাহার আলী ও এনামুল হক বলেন, নদীর পানি এই বাড়ে, এই কমে। নদীতে সব ভেসে গেল। আজকাল করে বাঁধের কাজ হচ্ছে না। আমরা দ্রুত বাঁধের কাজ চাই। বাঁধটা হলে আমাদের ক্ষেত-খামার রক্ষা পাবে।

পিয়ার জাহান (৭০) বলেন, খাবার দাবার কিছু নেই। নেতানেত্রীর দেখা নেই। প্রতি ঘরে গলা পরিমাণ পানি হয়ে গেল। কেউ একটা বিস্কুটও দিল না।

মশিয়ার রহমান বলেন, চরে এখন কিছু নেই। ধানের ওপর তিন ফুট বালি। এবার বন্যায় খুব ক্ষতি হলো। এবার ধান নষ্ট হলে, আগামী বছর না খেয়ে থাকতে হবে।

এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, যে জায়গাগুলোতে কম পরিমাণ বালি পড়েছে, তাদের মালচিং করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মালচিং করলে, সেগুলো হবে। বেশি পরিমাণ বালি পড়েছে, সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা নজর রাখছি, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।

জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, যেকোনো সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি আছে। চাহিদামতো বরাদ্দ দেয়া হবে।

তিস্তাপাড়ের ২ কোটি মানুষের জীবনে মহাদুর্যোগ: এদিকে আন্তঃদেশীয় ব্যবস্থাপনায় তিস্তা অববাহিকার দুই দেশ ভারত-বাংলাদেশ মিলে নদী ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে না পারা ও দেশীয় ব্যবস্থাপনায় নদী খনন, ভাঙন রোধে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে না পারায় তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশের ১১৫ কিলোমিটারে বসবাসরত ২ কোটি মানুষের জীবনে মহাদুর্যোগ নেমে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।

তাদের অভিযোগ, তিস্তা অববাহিকার রংপুর জনপদে খরা, বন্যা ও নদী ভাঙনে ঘরে ঘরে আহাজারি চলছে। নদী ভাঙনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বর্তমানে কোথাও কোথাও তিস্তা নদীর প্রস্থ হয়েছে ১০-১২ কিলোমিটার। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতি ক্রমাগত বেসামাল হয়ে উঠছে তিস্তাপাড়ের জনজীবন। এ পরিস্থিতিতে তিস্তা চুক্তি সই এবং নিজস্ব অর্থায়নে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন নদী আন্দোলনে সম্পৃক্ত নেতারা।

গতকাল রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন সমাবেশ থেকে এসব অভিযোগ তুলে অবিলম্বে ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সই ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। মানববন্ধনে তিস্তা নদীর দুই পাড়ের জেলা নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলা থেকে লোকজন রংপুরে আসেন।