পাপুল কুয়েতের নাগরিক নন

নিজস্ব প্রতিবেদক:অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার এমপি শহিদ ইসলাম পাপুল কুয়েতের নাগরিকত্ব পাননি বলে জানিয়েছে উপসাগরীয় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ওই বাংলাদেশি কুয়েতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কথা আসছে, তা ‘সঠিক নয়’।

‘ফরেনার্স রেসিডেন্টশিপ আইনে তিনি এখানে বসবাস করছেন এবং একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় তাকে পাবলিক প্রসিকিউশনের হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।’

পাপুল কুয়েতের নাগরিকত্ব নিয়ে থাকলে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এ সংসদ সদস্যদের পদ বাতিল হয়ে যাবে বলে বুধবার সংসদে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পরদিন এ বিষয়ে কুয়েত সরকারের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এলো।

এর আগে মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও বলেছিলেন, এমপি পাপুল কুয়েতের ‘লোকাল রেসিডেন্ট’। তবে নাগরিক কি-না, সে সময়ে তিনি তখন স্পষ্ট করেননি।

পাপুলের নাগরিত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম বলেন, ‘কুয়েতের নাগরিকত্ব আইন অনেক কড়া। আমার জানা মতে, উনার নাগরিকত্ব নেই। গত কয়েক বছরে এশিয়ার কেউ নাগরিকত্ব পেয়েছেন বলে আমার জানা নেই। দীর্ঘদিন ধরে উনি (পাপুল) এখানে রেসিডেন্সি পারমিট নিয়ে থাকেন। এ পারমিট কয়েক বছর পরপর নবায়ন করা লাগে।’

সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শুধু তা-ই নয়, স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি।

মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে মানব পাচার, অর্থ পাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।

প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেও পাপুলের বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে। কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে ওই ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পাপুল ও তার কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করেছে কুয়েত কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশেও তার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।

বুধবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় পাপুল প্রসঙ্গ এলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে কুয়েতের নাগরিক কি না সেটা কিন্তু কুয়েতের সঙ্গে আমরা কথা বলছি, সেটা দেখব। আর যদি এটা হয়, তাহলে তার ওই সিট হয়ত খালি করিয়ে দিতে হবে। কারণ যেটা আইনে আছে সেটা হবে। তার বিরুদ্ধে আমরা এখানেও তদন্ত করছি।’

তার ওই বক্তব্য নিয়ে কুয়েতের রাজনৈতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আলোচনার খবর দিয়েছে দেশটির বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। এ বিষয়ে কুয়েত সরকারের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানতে চান দেশটির একজন পার্লামেন্ট সদস্য। কুয়েত জাতীয় পরিষদের সদস্য ওসামা আল-শাহীনকে উদ্ধৃত করে এরেম নিউজে বলা হয়, ‘ঘটনার গভীরতা ও নাগরিকত্বের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া উচিত। বাংলাদেশের সংসদে যে আলোচনা হয়েছে, তা সত্য কি-না স্পষ্ট করা দরকার।’ কুয়েতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার খবরে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল-সালেহকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘বড় ধরনের দুর্নীতির প্রকাশ ঘটিয়েছে এ (পাপুলকাণ্ড) ঘটনা এবং বিষয়টি এখন পাবলিক প্রসিকিউশনের অধীনে রয়েছে। তারা যাদের বিষয়ে তদন্তের অনুরোধ করবেন, যাদের নাম প্রকাশ করতে চাইবেন এবং যাদের বিচারের আওতায় আনতে চাইবেন, তা করা হবে। সবকিছুর এখতিয়ার পাবলিক প্রসিকিউশনের রয়েছে। দুর্নীতিতে জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।’

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০