শেয়ার বিজ প্রতিনিধি, পাবনা: বন্যা-পরবর্তী সময়ে রোপা আমন চারা সঙ্কটে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন পাবনা জেলার হাজার হাজার কৃষক। এ বছর অতিবৃষ্টি ও বন্যায় কৃষিজমি প্লাবিত হয়ে ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এ জেলায় দুই হাজার ৮০০ হেক্টর ফসলি জমিতে নতুন করে আবাদে উদ্যোগী হতে পারছেন না কৃষক। যদিও কৃষি অধিদফতরের দাবিÑচারার সঙ্কট নেই।
চলমান আবাদ মৌসুমে কিছুটা সময় থাকলেও চারা সঙ্কট সমাধান না হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত কৃষক চাচ্ছেন কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা। তারা বলছেন, হাটবাজার ঘুরে সামান্য কিছু চারার নাগাল পাওয়া গেলেও তা অধিক দামে কিনতে পারছেন না পাবনা জেলার প্রান্তিক ও বর্গাচাষী কৃষক।
কৃষি অফিস দাবি করছে, চারার কোনো সঙ্কট নেই। এবার ৫১ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের পরিকল্পনা ছিল। এ পর্যন্ত আবাদ বেড়ে ৫১ হাজার ৫১৬ হেক্টরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিকল্পিত জমিতে আবাদের জন্য কৃষি অফিস জেলার সব উপজেলায় দুই হাজার ৫৭৯ হেক্টর জমিতে বীজতলা নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু অতিবর্ষণের ফলে কিছু বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চারা সঙ্কটের আশঙ্কায় কৃষক নতুন করে বীজতলা নির্মাণ করতে থাকেন। এতে বীজতলা নির্মাণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৯০৯ হেক্টরে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অতিরিক্ত চারা উৎপাদনের কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে চারা সহজলভ্য হওয়ায় কম দামে কৃষক চারা সংগ্রহ শুরু করেন। এ সময় প্রতি বিঘা জমিতে সাত-আটশ টাকার চারা কিনতে হয়েছে কৃষককে। চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর, সুজানগর ও বেড়া উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন হাটবাজারে কৃষক চাহিদার তুলনায় সীমিত চারা পাচ্ছেন। যেটুকু মিলছে, তার দাম নাগালছাড়া। অবশ্য বেশি বয়সী চারা একটু কম দামে পাওয়া গেলেও তার ফলন বিপর্যয় আশঙ্কায় খরিদে আগ্রহী হতে পারছেন না।
এদিকে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার দাবি করেন, চারার কোনো সঙ্কট নেই। পাবনায় উৎপাদিত চারা দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। বগুড়া জেলায়ও দেখা দিয়েছে চারা সঙ্কট। কৃষি অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক, বগুড়া অঞ্চলের নির্দেশে পাবনা থেকে সেখানেও চারা পাঠানো হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বগুড়া সফরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে চারা সরবরাহের নির্দেশে পাবনা থেকে বগুড়ায় চারা পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ চারা সংগ্রহে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খুঁজে বেড়াচ্ছে কৃষি অফিস। অথচ তারাই বাহবা নিচ্ছেন যে, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলাতেই প্রচুর চারা মজুত রয়েছে। অন্যদিকে আটঘরিয়া উপজেলার কৃষক মোসলেম জানান, তার জমি জলাবদ্ধ থাকায় আগাম আবাদ করতে পারেননি। বর্তমানে জমি আবাদযোগ্য হলেও চারা সঙ্কটে আবাদ করতে পারছেন না।
এ-ছাড়া চারা বিক্রেতা আকরাম হোসেন জানান, বর্তমানে আবাদ শেষের দিকে হলেও পানিতে তলিয়ে থাকা জমি জেগে ওঠায় কৃষক ওই জমি আবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। পাবনায় উৎপাদিত চারা অন্যান্য জেলায় যাওয়ার কারণে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে বাজারদর বেড়ে গেছে।
চলমান সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি এবারের বন্যায় এ জেলায় কৃষি খাতে দুই কোটি ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার স্থলে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আর্থিক পুনর্বাসন সহায়তা মাত্র ২২ লাখ ১৫ হাজার টাকা হলেও তার যথার্থ বণ্টন জরুরি বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।