পাবলিক পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায় ঠেকাতে করণীয়

চলতি ২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা অত্যাসন্ন। পরীক্ষা ছাত্রজীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক। এটি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত জীবনের পথে একটি বড় ধাপ। এটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের শিক্ষাগত ও পেশাগত পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি দিয়ে পরীক্ষার ফরম পূরণ করে তারা পরীক্ষার জন্য পরবর্তী প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। অনেক অভিভাবক আছেন যারা পরিবারের জন্য অতি প্রয়োজনীয় বিষয়টি উপেক্ষা করেও সন্তানের পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা জোগাড় করে দেন। ফরম পূরণের সময় খাতওয়ারি টাকা নিলেও পরীক্ষার সময় আবারও কেন্দ্র ফি ও প্রবেশপত্রের জন্য টাকা নেয়া হয় এবং ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্যও আলাদা করে টাকা নেয়া হয়। শুধু তা-ই নয়; পরীক্ষার পরও সনদপত্র এবং নাম্বারপত্র নেয়ার সময়ও টাকা নেয়া হয়; যা কোনোভাবেই যৌক্তিক বলে মনে হয় না। পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত টাকা আদায় করা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সমস্যাও হতে পারে। বিষয়টা অনেকটা একই মুরগিকে দুইবার জবাই করার মতো। তবে কেন্দ্র ফি, প্রবেশপত্রের জন্য টাকা নেয়া নম্বরপত্র এবং সনদপত্রের জন্য টাকা নেয়ার বিষয়টি অতীতেও ছিল। এভাবে অতিরিক্ত ফি আদায় শিক্ষার্থীদের কাছে ভালো কোনো বার্তা দেয় না। আমাদের মনে রাখা দরকার, আজকের শিক্ষার্থী আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালনা। আর এখনই এই অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করতে না পারলে এই অন্যায় অনিয়ম, শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধ করতে না পারলে এই অন্যায় এই অনিয়ম, এই অত্যাচার সামাজিক নিয়ম এবং রীতিতে পরিণত হবে। যার নেতিবাচক প্রভাব ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক জীবনের পড়বে। এটি শুধু অর্থনৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের এবং তাদের পরিবারকে শুধু চাপের মধ্যে ফেলে না, বরং তাদের মনোবল ও মনোযোগেও প্রভাব ফেলে। দুইবার করে কেন্দ্র ফি, প্রবেশপত্র ফি, নম্বরপত্র এবং সনদপত্র ফি আদায় শিক্ষার্থীদের এবং তাদের পরিবারের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষত দরিদ্র এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা সৃষ্টি করে। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ কমে যায়; ফলে সমাজে শিক্ষা ও পেশাগত ক্ষেত্রে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানেও পিছিয়ে পড়ে, যা সামগ্রিকভাবে সমাজের দক্ষতা হ্রাস করে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন্ন হয় এবং শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা শিক্ষকদের ওপর শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। শুরু হয় নৈতিকতার পতনের নতুন অধ্যায়। আর এই পথ ধরে আমরা হাঁটছি বহু বছর ধরে।

বোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোয় নিয়মিত মনিটরিং করা। যে কোনো অনিয়ম বা অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ঘটনা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।  শিক্ষার্থীরা যেন কোনো ধরনের ভীতি ছাড়াই অভিযোগ জানাতে পারে, এ জন্য একটি গোপন হেল্পলাইন ও অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন করা উচিত। শিক্ষার্থীদের মাঝে এই সুবিধার প্রচার করতে হবে; যাতে তারা অভিযোগ করতে উৎসাহী হয়। পরীক্ষার কেন্দ্রের প্রধানদের তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের এবং তাদের অভিভাবকদের বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। বোর্ড কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য মাধ্যম থেকে ফি-সংক্রান্ত তথ্য প্রচার করতে হবে। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কোনো ঘটনা ধরা পড়লে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যমকে এ ধরনের অনিয়ম সম্পর্কে প্রতিবেদন করতে উৎসাহী করতে হবে। গণমাধ্যমে এ সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা এবং বিতর্ক চালিয়ে যেতে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।

সুধীর বরণ মাঝি

হাইমচর, চাঁদপুর

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০