Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:29 am

পাবলিক স্যানিটেশন নিয়ে সংকট ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত ও পাকিস্তানে স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন-সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বহুদিন ধরেই বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব দেশে স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন সমস্যা নিয়ে সরকার, সিভিল সোসাইটি অরগানাইজেশন, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে; তবে, স্থানস্বল্পতা ও অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি দ্রুত নগরায়ণ এসব ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ধারাবাহিকভাবে প্রতিকূলতা তৈরি করছে, ফলে পাবলিক স্যানিটেশন নিয়ে সংকট ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ওয়াটারএইড, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টাফ কলেজ অব ইন্ডিয়া (এএসসিআই), বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং কিম্বারলি-ক্লার্কের যৌথ উদ্যোগে গতকাল রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘সাউথ এশিয়ান এক্সচেঞ্জ অন পাবলিক স্যানিটেশন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথ্য বলেন।

বৈঠকে উপস্থিত অতিথি ও অংশীজনরা পাবলিক স্যানিটেশন বিষয়ে সচেতনতা নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও ভাবনা তুলে ধরেন; পাশাপাশি, মতবিনিময়কালে তারা কোন বিষয়গুলোয় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠানে জনস্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

গোলটেবিল আলোচনা ও প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়ার  আতিকুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আকবর হোসেন, ওয়াটারএইডের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ডা. মো. খায়রুল ইসলাম, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, পরিচালক, সেন্টার ফর আরবান গভর্নেন্স, এনভায়রনমেন্ট, এনার্জি, অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ভি. শ্রীনিবাস চারি, এএসসিআইয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম স্নেহলতা প্রমুখ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত এই গোল টেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন।

চলতি বছরের মার্চ ও জুলাই মাসে ভারত, নেপাল এবং বাংলাদেশে সফরকালে প্রতিনিধিরা ভারতের হায়দ্রাবাদ, ওয়ারাঙ্গল, দিল্লি, কলকাতা, কাঠমান্ডু, ললিতপুর ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পাবলিক স্যানিটেশন সুবিধা-সংক্রান্ত জায়গা ও স্থাপনা ঘুরে দেখেন। ভবিষ্যতের জন্য করণীয় হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় অ্যাসপিরেশনাল পাবলিক টয়লেট ফিচার এবং এগুলোর পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা মডেল প্রভৃতিকে আরও ভালোভাবে সংজ্ঞায়িত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা তৈরি ও অনুসরণের প্রয়োজনীয়তাও আলোচিত হয়।

সর্বসাধারণের সমস্যা মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখন থেকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সব পেট্রোল ও গ্যাস স্টেশন এবং শপিংমলগুলোয় পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক পাবলিক টয়লেট থাকতে হবে, যেগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ, সর্বসাধারণের ব্যবহারযোগ্য ও জেন্ডারবান্ধব হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাবলিক টয়লেটগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে এখন থেকে আমরা এগুলোয় বিজ্ঞাপন প্রদান সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।’ তিনি আশ্বাস দেন, পাবলিক টয়লেট-সংক্রান্ত সব উদ্যোগে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ তাদের পূর্ণ সহায়তা প্রদান করবে।

অনুষ্ঠানে ওয়াটারএইড দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ডা. মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘সাউথ এশিয়ান এক্সচেঞ্জের মতো আঞ্চলিক শিক্ষা আন্তঃবিনিময় আয়োজন নিজেদের মধ্যে সেরা অনুশীলন, ধারণা ও উদ্ভাবনগুলো ভাগ করে নেয়ার জন্য দুর্দান্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে কার্যসংক্রান্ত রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এবং অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নারীদের জন্য নির্বিঘেœ পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ তৈরির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এটি সহায়তা করে।’

অধ্যাপক ভ. শ্রীনিবাস চ্যারি বলেন, ‘ভোটদানের মতোই পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ লাভ করা প্রতিটি নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার, যা গণতান্ত্রিকতা নিশ্চিতকরণেরও এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাবলিক টয়লেট ব্যবহার সুবিধা উন্নয়নের প্রশ্নে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো অনেক এগিয়ে।

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এরই মধ্যে বেশ কিছু পাবলিক টয়লেট নকশা ও নির্মাণ করেছে, যা থেকে বর্তমানে উপকৃত হচ্ছেন লাখো মানুষ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৬ অর্জন এবং সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য নির্ভরযোগ্য পাবলিক স্যানিটেশন নিশ্চিত করা অন্যতম পূর্বশর্ত। উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাউথ এশিয়ান এক্সচেঞ্জ অন পাবলিক স্যানিটেশনে যুক্ত হতে পেরে এবং এই আয়োজনে নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশ থেকে সম্মানিত সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা মেয়রবৃন্দ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ করতে পেরে আমরা গর্বিত বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।

এছাড়া আয়োজনে প্রদর্শনীর মাধ্যমে পাবলিক স্যানিটেশনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদ্ভাবন উপস্থাপন করা হয়। প্রদর্শনীতে ওঅ্যান্ডএম মডেলস (বাংলাদেশ), সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ (বাংলাদেশ), সোশ্যাল অডিট (ভারত), ইনোভেশন প্রজেক্টস (ভারত) এবং বাস ট্যুর অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন (নেপাল) তুলে ধরে হয়। এ সময় প্রতিনিধি ও অংশীজনেরা পাবলিক টয়লেট, কার্যক্রম ও রক্ষণাবেক্ষণ, পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্ব, উদ্ভাবন ও পর্যবেক্ষণের জন্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়ভিত্তিক উপাদানগুলো নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন।