Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 8:20 pm

পায়রা বন্দর ড্রেজিংয়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার চুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থে প্রথম প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গতকাল ‘পায়রা বন্দরের রামনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বেলজিয়াম-ভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জেন ডি নুলের (জেডিএন) সঙ্গে এই চুক্তি হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে চার হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। রিজার্ভের অর্থে গঠিত বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল থেকে এ প্রকল্পে ঋণ দেয়া হবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চেধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহম্মদ কায়কাউস ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন সচিব মো. মেজবা উদ্দিন চৌধুরী এবং বক্তব্য রাখেন পায়রা বন্দরের চেয়্যারম্যান কমোডর হুমায়ুন কল্লোল।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমরা বুভুক্ষু জাতি নই। আমাদের সম্পদ আছে, সম্পদের কোনো অভাব নেই। যেটার অভাব মাঝে মাঝে হয় সেটি হচ্ছে সততা, দায়বদ্ধতা ও জাতির প্রতি দায়িত্বশীলতার অভাব। আমাদের মাটির দিকে তাকাতে হবে। নিজেদের নদীনালা, খালবিল, পাহাড়Ñসবই নিজেদের আয়ত্তে আনতে হবে। বহিরাগত চিন্তার দরকার নেই। প্রধানমন্ত্রী পায়রা নামটি দিয়েছেন। সময়ের শক্তি ও জ্ঞানবিজ্ঞানের শক্তি কাজে লাগিয়ে বাঙালিকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করছে সরকার।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রিজার্ভের অর্থে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রথম প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। এটি প্রধানমন্ত্রী যে পেশার স্বাধীনতা দিয়েছেন, তারই একটি উদাহরণ হচ্ছে আজকের চুক্তি। এ বন্দরটি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্বখ্যাত বেলজিয়াম-ভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জান ডি নুলের সঙ্গে একটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ চুক্তি করেছিলাম, যেখানে বিদেশি অর্থায়নের মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী চুক্তির অর্থায়নের ধরন পরিবর্তন করে নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে প্রকল্পটি সম্পাদন করার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে বিদেশি কোম্পানি জান ডি নুল জির সঙ্গে নেগোসিয়েশনের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান অনেক বেশি শক্তিশালী এবং প্রকল্পের অত্যাবশ্যাকীয় অংশগুলো রেখে কার্যকর নেগোসিয়েশনের ফলে প্রকল্পের ব্যয় কমে চার হাজার ৯৫০ কোটি দাঁড়ায়, অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হয়।

ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, সুষম উন্নয়নে এই বন্দর বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কাজটি দ্রুত শেষ করতে হবে। দেশের সম্পদ কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, সেটি দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই পুরো প্রক্রিয়াটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সবাই মিলে কাজ করায় প্রকল্পের কাজ ঠিক থাকলেও ব্যয় অনেক কমেছে। এটিও একটি উদাহরণ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মাধ্যমে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীকালে ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী বন্দরটিতে জাহাজ চলাচলের উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করেছে, যা থেকে সরকারের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে। পায়রা বন্দরটি আন্ধারমানিক নদীর তীরে রামনাবাদ চ্যানেলে অবস্থিত। নিরবচ্ছিন্নভাবে জাহাজ চলাচলের জন্য বর্তমানে চ্যানেলে মেইন্টেন্যান্স ড্রেজিং চালু রয়েছে, যার ফলে চ্যানেলের গভীরতা ছয় দশমিক তিন মিটার বজায় রাখা হচ্ছে। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বন্দরে অধিকতর বড় জাহাজ ভিড়ানোর জন্য এর আগে বেলজিয়াম-ভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জান ডে নুলের সঙ্গে একটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এর ফলে রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলের গভীরতা ১০ দশমিক পাঁচ মিটারে উন্নীত করে বন্দরে ৪০ হাজার টন কার্গোবাহী এবং তিন হাজার টিইইউ বিশিষ্ট জাহাজ বন্দরে সরাসরি ভিড়তে সক্ষম হবে।