পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বেড়েছে ৬৪%, ব্যয় ১০১%

ইসমাইল আলী: পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। চাহিদার ভিত্তিতে গড়ে কেন্দ্রটিতে ৭০০ থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। জ্বালানি ঘাটতি তথা কয়লা সংকটের কারণে গত অর্থবছর একবার কেন্দ্রটি কয়েক দিন বন্ধ ছিল। তারপরও ২০২২-২৩ অর্থবছর দেশের সংকটের সময় সর্বোচ্চ সক্ষমতায় কেন্দ্রটি চালানো হয়। যদিও এ সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, গত অর্থবছর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৬৪ শতাংশ। তবে এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১০২ শতাংশ। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম বেড়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো ও দেশে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়াকে ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কয়লার দাম কমতে থাকায় চলতি অর্থবছর এ ব্যয় আবারও কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০২১-২২ অর্থবছর পায়রায় নিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৯৯ দশমিক ৮৩ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয়েছিল পাঁচ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল দুই হাজার ৬০৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আর এনার্জি চার্জ তথা কয়লার বিল দেয়া হয়েছিল তিন হাজার ৩৬২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাদ দেয়ার পর ওই অর্থবছর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) নিট মুনাফা হয়েছিল ৭৬১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পায়রায় নিট বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫৫ দশমিক ১৩ কোটি  কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে মোট ব্যয় হয়েছিল ১২ হাজার ৩৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ২৫৫ দশমিক ৩০ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বা ৬৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ছয় হাজার ৬৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা ১০১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

গত অর্থবছর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ব্যয়ের মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয় চার হাজার ১০৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আর এনার্জি চার্জ তথা কয়লার বিল দেয়া হয় সাত হাজার ৯২৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়েছে এক হাজার ৫০৫ কোটি ১০ লাখ টাকা বা ৫৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। তবে জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে চার হাজার ৫৬১ কোটি ৪১ লাখ টাকা বা ১৩৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাদ দেয়ার পর গত অর্থবছর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিসিপিসিএলের নিট মুনাফা দাঁড়ায় ৯৯২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছর কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ২৩০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বা ৩০ দশমিক ২৬ শতাংশ। অথচ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৬৪ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত দুটি কারণে গত অর্থবছর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ব্যয় এতটা বৃদ্ধি পায়। প্রথম কারণটি হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম বেড়ে যাওয়া। গত অর্থবছরের শুরু থেকে কয়লার দাম বাড়তে থাকে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তা রেকর্ড ৪০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে ফেব্রæয়ারি থেকে কমতে শুরু করে। যদিও কয়লা সাধারণত তিন মাস আগেই কিনতে হয়। তাই দাম কমার সুফল পাওয়া যায়নি।

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়াকে। গত অর্থবছর শুরুতে ডলারের বিনিময় হার ছিল ৯৩ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থবছর শেষে তা ১১০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। আর কেন্দ্রটির কয়লা আমদানি মূল্য ও ক্যাপাসিটি চার্জ ডলারে পরিশোধ করতে হয়। এতে জ্বালানি ব্যয় ও ক্যাপাসিটি চার্জ উভয়ই বেড়ে গেছে। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে চায়না এক্সিম ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের সুদহারও অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণেও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে।

জানতে চাইলে বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, গত অর্থবছর কয়লার দাম তিনগুণ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ে। জ্বালানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। তবে চলতি অর্থবছর কয়লার দাম কমছে। এতে ২০২৩-২৪ অর্থবছর উৎপাদন ব্যয় কমে আসবে। এছাড়া ডলারের বিনিময় হার ও ঋণের সুদহারও অনেক বেড়ে গেছে। এসব কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়নি।

প্রসঙ্গত, ২০২১-২২ অর্থবছর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বেড়েছিল মাত্র সাড়ে চার শতাংশের কিছু বেশি। তবে ওই বছর উৎপাদন ব্যয় বেড়েছিল ৬১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এতে মুনাফা না বেড়ে উল্টো ২২ দশমিক ৬১ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ওই অর্থবছরও একই কারণেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০