পারকি হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য দায়ী প্রভাবশালীরা

এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): কারও কাছে মিনি কক্সবাজার, কারও কাছে প্রকৃতির রূপসী কন্যা হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের আনোয়ারা পারকি সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রামের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটি ঝাউ বাগান নামেও পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে এ গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পটটির ওপর চলেছে ধ্বংসযজ্ঞ। বালিচরের সৈকতটি বালি হারিয়ে এখন কাদা-মাটিতে ভরপুর। একদিকে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পট, অন্যদিকে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, তবু নীরব প্রশাসন, বন বিভাগ ও বিচ কর্তৃপক্ষ। বিচ কর্তৃপক্ষ ও বন বিভাগ একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। তবে পারকির ঝাউবন রক্ষায় এগিয়ে আসছে না কোনো পক্ষ। স্থানীয়দের অভিমত, পারকি খুঁড়ে খাচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসন ও পর্যটকদের অবহেলা এবং সমুদ্র থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে পারকি তার চিরচেনা রূপ হারাচ্ছে। এ ছাড়া দূষণের ঝুঁকিতে পড়ে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাগরপাড়ের উদ্ভিদ ও সাগরের জীববৈচিত্র্য।

সরেজমিন দেখা গেছে, যেসব ঝাউগাছ ঘিরে এ সৈকত গড়ে উঠেছে, তার অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। সৈকতের দক্ষিণ অংশের বেশিরভাগ গাছ শিকড় থেকে মাটি হারিয়ে হেলে পড়ছে। একসময় সৈকতে বালিতে হাঁটা দুষ্কর ছিল, এখন সেই সৈকতে কাদা-মাটি ছাড়া বালির লেশমাত্র নেই। বেশিরভাগ গাছ গোড়ার মাটি হারিয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব পড়েছে আরও মারাত্মকভাবে। ঝাউয়ের গোড়া থেকে বালি হারিয়ে গাছগুলো অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। বিচের দক্ষিণ অংশে হেলে পড়া ঝাউগাছের গোড়ালির দৃশ্যগুলো তারই প্রমাণ বহন করে। উপকূলীয় বন ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। একসময় হয়তো বিলুপ্তিই ঘটবে। বন উজাড়ের পাশাপাশি সমুদ্রভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কীÑএ নিয়ে পর্যটক ও স্থানীয়দের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র ক্ষোভ। এ ছাড়া বিচ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পর্যটকদের জন্য নেই কোনো সরকারি নির্দেশনা ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এ পর্যটন এলাকা সুরক্ষার দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হলেও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা পারকি সুরক্ষায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। পারকির বালি গিলে খাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী বিভিন্ন মহল। রাতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে তোলা হয় সৈকতের বালি।

পারকির ঝাউবন রক্ষায় প্রশাসনের নেই কার্যকর পদক্ষেপ। বিচ এলাকায় মোটরগাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিবিশেষের টোকেনে অনেকেই পুরো দিন মোটরবাইক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ কারণে বালির বিচ এখন কাদার বিচে পরিণত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সৈকত থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ এবং ঝাউ সংরক্ষণের দায়িত্ব না নিলে উপকূলীয় বন এলাকা ও সৈকত বিপন্ন হতে পারে।

পারকির উন্নয়নে পর্যটন করপোরেশনের ৬১ কোটি টাকার সবচেয়ে বড় প্রকল্প পর্যটন কমপ্লেক্সের পুরো কাজই যেন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া দুই বছর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও এখনও দৃশ্যমান কিছুই হয়নি। প্রকল্পটির সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, শুরু থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, সাইট ইঞ্জিনিয়ার, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, ইউএনও, এসি (ল্যান্ড), ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ প্রভাবশালী বিভিন্ন মহল। জমি অধিগ্রহণের টাকা পাননি কোনো জমির মালিক। এ নিয়ে জমির মালিকদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। সব মিলে এ প্রকল্পটির কাজে চলছে নানা অনিয়ম। কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে।

স্থানীয় সচেতনমহল মনে করে, পারকির ঝাউবন হারিয়ে গেলে শুধু বিচের সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে তা নয়, এর প্রাকৃতিক প্রভাব পুরো উপজেলায় পড়বে।

পারকি পর্যটন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, আমরা পর্যটন এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া পারকির পরিবেশ ও উন্নয়নের জন্য বিচ কমিটি এবং সহযোগী বিভাগ কাজ করে থাকে। পর্যটনের উন্নয়নে সরকার মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যা শিগগির বাস্তবায়িত হলে পারকি তার চেনা রূপ ফিরে পাবে এবং বাণিজ্যিক বিনোদন স্পটে পরিণত হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০