Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:30 am

পার্কিং সমস্যার সমাধান দেবে নেক্সপার্ক

যানজট রাজধানীর নিত্যসমস্যা। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এ সমস্যার অন্যতম কারণ হলেও পর্যাপ্ত পার্কিং স্পেস সুবিধা না থাকায় সরকারের কোনো উদ্যোগে এর সমাধান মিলছে না। এ অবস্থায় কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পার্কিং স্পেস সুবিধা নিয়ে এসেছে মোবাইল ফোন অ্যাপে। এসব অ্যাপের মাধ্যমে সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে নিরাপদ পার্কিং স্পেস।
এক রিপোর্টে দেখা গেছে, রাজধানীর মোট সড়কের ৫৫ শতাংশ জায়গা দখলে রাখে প্রাইভেটকার। এসব প্রাইভেটকার যখন পার্কিংয়ের অভাবে রাস্তায় পার্কিং করে, তখন জ্যাম আরও বেড়ে যায়। অসহনীয় যানজটের কারণ খুঁজতে গিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং না করা। আর নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং না করার অন্যতম বাধা দুটি: প্রথমত পার্কিং সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকা। দ্বিতীয়ত পর্যাপ্ত পার্কিং না থাকা। এ দুটি না থাকা তথ্যকে এক করার জন্য নেক্সপার্ক টিম কাজ করে যাচ্ছে ২০১৭ সাল থেকে।
পার্কিংয়ের এ সমস্যার কিছুটা সমাধানের জন্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নেক্সপার্ক টিম তৈরি করেছে বাংলাদেশের প্রথম পার্কিং অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ‘নেক্সপার্ক’। প্রতিষ্ঠানটির মতে, এটি বাংলাদেশের প্রথম শেয়ারিং পার্কিং প্ল্যাটফর্ম। এ অ্যাপটির মাধ্যমে পছন্দমতো স্থান বাছাই করে সেখানে পার্কিং করতে পারবেন। অপরদিকে গ্যারেজ মালিকরা তাদের পার্কিং স্পেস ভাড়া দিতে পারবেন। অর্থাৎ প্রতি মাসে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ রয়েছে।
তরুণদের উদ্দেশে আইটি খাতে ক্যারিয়ার গঠনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন নেক্সপার্কের ফাউন্ডার ও সিইও মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান। তিনি ১০ বছর ধরে কাজ করেছেন দেশের আইটি সেক্টরে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক, টেলিকম ও আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার ফার্মে কাজের অভিজ্ঞতা।
কীভাবে নেক্সপার্কের উদ্ভাবনী আইডিয়া এলো? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের চেয়েও বেশি ট্রাফিক আছে; কিন্তু সেটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ঢাকার ট্রাফিক সমস্যার সমাধান অসম্ভব নয়; আমাদের চেষ্টা থাকলে হবে। সিটি করপোরেশনের ঘণ্টায় এক হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয় পার্কিং সেবা দিতে। আমরা এই ডেটাগুলোকে সমন্বয়ের চেষ্টা করেছি। আমাদের প্রাথমিক জরিপে বেরিয়ে এসেছে যদি পার্কিংয়ের যথাযথ তথ্য দিতে পারি এবং সেটা যদি সহজলভ্য হয়, অর্থাৎ ফোনে যদি এই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে গাড়িটি অবশ্যই সঠিক জায়গায় পার্কিং করা সম্ভব। আমাদের প্রাথমিক আইডিয়া ছিল রাস্তার পাশের গাড়িগুলো যদি না থাকে, তাহলে যানজট অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। একটি গাড়ি সকালে বেরিয়ে যাওয়ার পর গ্যারেজ খালিই পড়ে থাকে। সেখান থেকে মাথায় আসে খালি গ্যারেজের আইডিয়া। এরপর শুধু দরকার ছিল তাদের সমন্বয় করা, আর এ জন্য প্রয়োজন ছিল একটি প্ল্যাটফর্ম। এ দুটো সমন্বয় করতেই নেক্সপার্কের উদ্ভাবন। নেক্সপার্ক শুধু পার্কিং সমাধানই নয়, এটি আয়ের উৎসও বটে।
নেক্সপার্ক কীভাবে কাজ করে এ প্রশ্নের জাবাবে তিনি জানান, প্রতিদিন মানুষের চলার পথে অনেক সময় গাড়ি নিয়ে অনেক জায়গায় যেতে হয়। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পার্কিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে। তখন সামাধান দেবে নেক্সপার্ক। এই অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি ও মোটরসাইকেল ছাড়াও বাইসাইকেল, মাইক্রোবাস পার্কিং করা সম্ভব। তবে শিগগিরই ট্রাক ও পিকাআপের পার্কিং সুবিধা চালু করব।
অনেকের গ্যারেজ সারা দিন ফাঁকা থাকে। সকালে গাড়ি নিয়ে বের হলে কাজ থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত খালি পড়ে থাকে। সে সময়টুকু যদি গ্যারেজ নেক্সপার্কের মাধ্যমে ভাড়া দেওয়া হয়, তাহলে অনায়াসে মাসে আনুমানিক ২০-২৫ হাজার টাকা আয় সম্ভব বলে জানান শাহরিয়ার খান। এ সেবার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানান, প্রথমে নেক্সপার্ক ঢাকায় কাজ শুরু করেছে। পরে আমরা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী ও সিলেটে এটা চালু করেছি। সরকার যদি এগিয়ে আসে, তাহলে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আমরা প্রজেক্টটি বিস্তৃতভাবে সাজিয়ে জনগণকে সেবা দিতে চাই। ট্রাফিক সমস্যা আমাদের সমাজের একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যার সমাধান একার পক্ষে সম্ভব নয়। তবু যদি আমাদের এ উদ্যোগ সমাজের একটু হলেও কাজে আসে, একজন রোগী যদি সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসাসেবা নিতে পারে, তাহলেই আমাদের এ চিন্তা ও উদ্যোগ সফল হবে।
বাংলাদেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ পার্কিং অ্যাপটিতে রয়েছে এক লাখের বেশি পার্কিং ইনফরমেশন, তিন হাজারের বেশি মাসিক পার্কিং ইনফরমেশন, ২০০টির বেশি পার্টনার্স নেটওয়ার্ক, পাঁচটি বিভাগীয় শহরে কভারেজ ও ৫০০-এর বেশি ইমারজেন্সি লোকেশন। এছাড়া নেক্সপার্কের টিম বিভিন্ন ইভেন্টে পার্কিং পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন শপিংমলে সঠিক পার্কিংয়ের প্রয়োজনীয়তা ও নেক্সপার্ক অ্যাপটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য হাতে-কলমে শেখাচ্ছে ব্যবহারকারীদের।

রতন কুমার দাস