পার্বত্য দুই জেলায় সংঘর্ষে নিহত ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক: অশান্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি। প্রথমে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে খাগড়াছড়িতে। পরে সেটির উত্তাপ ছড়িয়েছে পাশের রাঙামাটি জেলাতেও। দুই জেলায় দফায় দফায় সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
খাগড়াছড়ির সদর উপজেলায় গতকাল বেলা ২টা থেকে ১৪৪ ধারা জারির নোটিশ জারি করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় স্বাক্ষরিত আদেশে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকার কথা বলা হয়েছে।

এদিকে নাশকতা রোধে খাগড়াছড়ি পৌর শহর ও জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের সহিংসতা রোধে এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।’ একইভাবে গতকাল সকাল থেকে রাঙামাটিতে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনার পর পৌর এলাকায় বেলা ১টা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।

এর আগে খাগড়াছড়ির ঘটনার জের ধরে শুক্রবার সকাল থেকে রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে একজন নিহত ও কমপক্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এ সময় আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়সহ কমপক্ষে ৩০টি বাড়িঘর ও দোকানপাটে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ১০টায় খাগড়াছড়িতে পাহাড়িদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ এবং তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে রাঙামাটি স্টেডিয়াম এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন পাহাড়ি ছাত্র-জনতা। এতে প্রায় কয়েক হাজার লোকের সমাগম হয়। স্টেডিয়াম থেকে মিছিলটি বনরূপা এলাকায় পৌঁছালে তাতে কে বা কারা পাথর নিক্ষেপ করে। এরপর পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষের জেরে গত বৃহস্পতিবার রাতভর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। রাতের গোলাগুলি ও বিকালের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন পাহাড়ি নিহত হন, আহত হন কমপক্ষে ১৫ জন। এদিকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর হামলা, হত্যা ও বিহার-ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এ ছাড়া দলটি ঢাকায় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা আয়োজিত সমাবেশ থেকে ঘোষিত তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ৭২ ঘণ্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফের সহসভাপতি নতুন কুমার চাকমা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি হামলাকে বর্বরোচিত ও ন্যক্কারজনক বলে উল্লেখ করে বলেন, গতকাল খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সদরে বাসস্টেশনের বটতলা লারমা স্কোয়ারে মিছিলসহ এসে বাঙালিরা পাহাড়িদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং দোকান-ঘরবাড়িসহ একটি বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করে। এ সময় হামলায় গুরুতর আহত ধন রঞ্জন চাকমা (৫০) খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মারা যান। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন আহত হন।

বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পাহাড়িদের ওপর এ ধরনের বর্বর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তার সরকার এ হামলার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার কোনো বিচার আজও হয়নি। হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এমন হামলা পাহাড়িদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না।

ইউপিডিএফ নেতা অবিলম্বে পাহাড়িদের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত-নিহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি ঢাকায় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার ঘোষিত তিন পার্বত্য জেলায় আগামীকাল (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে ৭২ ঘণ্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানান এবং এই কর্মসূচি সফল করতে নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি সদরের পানখাইয়াপাড়ার নিউজিল্যান্ড এলাকায় মামুন নামের এক যুবককে চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে দীঘিনালা সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেছিল। সেখানে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এর পর থেকেই অশান্ত হয়ে ওঠে পাহাড়ি জনপদ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০