Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 4:13 am

পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞায় কেমন ক্ষতি হবে রাশিয়া ও প্রতিপক্ষের?

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে জার্মানিতে গ্যাস পাইপলাইনের (নর্ড স্ট্রিম ২) কাজ বন্ধ করে দেয়া। যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার পাঁচ ব্যাংক (রোসিয়া, আইএস ব্যাংক, জেনারেল ব্যাংক, প্রোমসভায়াজ ব্যাংক ও ব্ল্যাক সি) ও তিন ধনকুবেরের (গেনেদি তিমচেনঙ্কো, বরিস রোটেনবার্গ ও ইগোর রোটেনবার্গ) ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া। ব্যাংক ও ব্যক্তিদের সব সম্পদ জব্দ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার চারটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একই সঙ্গে রাশিয়ার অর্থনীতিকে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ইইউতে (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) রুশ ব্যাংকগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জাপানের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ব্যাংক ভিইবিআরএফ, রাষ্ট্রসমর্থিত ব্যাংক, প্রোমসভে ও ব্যাংক রোসিয়া। খবর: বিবিসি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান ও আরআইএ।

এই নিষেধাজ্ঞার জবাবে রাশিয়া বিদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ জব্দের ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল জাতিসংঘে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপ্রপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ এই ঘোষণা দেন। ইতোমধ্যে এই ঘোষণা কার্যকর শুরু হয়েছে বলে জানায় রুশ সংবাদ সংস্থা আরআইএ। যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও অন্যান্য অঞ্চলে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদও রাশিয়ার জাতীয়করণ করার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।

এদিকে রাশিয়াকে সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) থেকে বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ। বিশ্বের প্রধান আর্থিক লেনদেন পরিষেবা এই সুইফট। এ সেবা থেকে বাদ পড়লে রাশিয়ার বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অচল করা যাবে বলে মনে করছে দেশগুলো। সুইফট থেকে বাদ পড়লে রাশিয়ার অর্থনীতির ক্ষতি হবে। সাধারণ লেনদেনগুলো সরাসরি ব্যাংকগুলোর মধ্যে পরিচালনার প্রয়োজন পড়বে অথবা নতুন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যাতে অতিরিক্ত খরচ ও সময় লাগবে।

১৯৭০ সালে গঠিত হয় সুইফট। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায় বেলজিয়ামের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইফটের দেখভাল করে এবং বাণিজ্য বিরোধে নিরপেক্ষ থাকে। সুইফট সামলাতে রাশিয়াও বিকল্প লেনদের ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। তাই সুইফট থেকে বাদ পড়লে রাশিয়ার ব্যবসার তেমন গুরতর প্রভাব নাও পড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, চীন সুইফটের পরিবর্তে নিজস্ব লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করেছে। সুইফটে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে এর প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের চিপস সিস্টেমের ব্যবহার বাড়বে। এতে বিশ্বব্যাপী রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে মার্কিন ডলারের স্থিতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একই সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো বিকল্প মুদ্রার ব্যবহার বাড়তে পারে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র সুইফটে নিষেধাজ্ঞা উচ্চবাচ্য করছে না। বাইডেন বরং বলেন, বাদ পড়লে আরও অনেক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তাছাড়া ইইউতে অপরিশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কঠিন জীবাশ্ম জ্বালানির বড় সরবরাহকারী রাশিয়া। ইইউ নিষেধাজ্ঞা দিলে এসব পণ্যের বিকল্প জোগানদাতা খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে রুশ ফার্মগুলোর মতো তাদের মিত্রদেরও ক্ষতি হতে পারে। রাশিয়া বিদেশে উৎপাদিত পণ্যের একটি বড় ক্রেতা। এটা নিয়েও চিন্তিত বাইডেন প্রশাসন।

এ ছাড়া মস্কোর কাছে বৈদেশিক মুদ্রার পর্যাপ্ত রিজার্ভ রয়েছে, যার বেশির ভাগ আয় স্বর্ণ থেকে আসে। এর পরিমাণ এখন ৬৩ হাজার ৬০ কোটি ডলার, যা ২০১৪ সালের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। সে বছর রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলের পর একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল এবং রিজার্ভের কারণে সেই ধাক্কা সামলে ছিল রাশিয়া। বর্তমান রিজার্ভ দিয়েও কয়েক বছর নিজেকে সব ধরনের ঝামেলা থেকে দূরে রাখতে পারবে দেশটি। এ ছাড়া ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনৈতিক জোট) রাশিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলবে। তাই রাশিয়ার ওপর নতুন এই অবরোধের প্রভাব সামান্য হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর থেকে পুঁজিবাজারে রুশ ডলার বন্ডের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। অথচ রাশিয়ার বৃহত্তম ব্যাংক সবেরব্যাংক ও ভিটিবির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আট বছর আগের চেয়ে এখন রাশিয়ার অর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পশ্চিমা অবরোধ মোকাবিলায় দক্ষ হয়ে উঠেছে এবং তারা যেকোনো সময় পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে।