পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ও দাম

ইসমাইল আলী:দুই বছর ধরে দেশে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়। এতে ঘাটতি বাড়ছে গড় উৎপাদন ব্যয় ও বিদ্যুতের দামে। এ ঘাটতি পূরণে ভর্তুকির পাশাপাশি দাম বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের। তিন মাসে দুইবার বাল্ক (পাইকারি) ও তিনবার বেড়েছে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম। এর পরও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ও দামের মধ্যে পার্থক্য কমেনি। বরং ঘাটতি বাড়ায় লোকসান বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি এ বিশ্লেষণটি বিদ্যুৎ বিভাগে উপস্থাপন করা হয়। এতে দেখা যায়, গত অর্থবছর বাল্ক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ও দামের মধ্যে পার্থক্য ছিল চার টাকা ৩৫ পয়সা। দুই দফা বাড়ানোর পরও চলতি অর্থবছর ঘাটতি দাঁড়াবে গড়ে চার টাকা ৮৪ পয়সা। আর গ্রাহক পর্যায়ে ২০২১-২২ অর্থবছর ঘাটতি ছিল চার টাকা ৩৫ পয়সা। তিন দফা দাম বাড়ানোর পরও চলতি অর্থবছর ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ছয় টাকা ২০ পয়সা।

পিডিবির তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছর বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল আট টাকা ৫৪ পয়সা। তিন শতাংশ ট্রান্সমিশন লস বিবেচনায় এ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি ৮ টাকা ৯৬ পয়সা। এর সঙ্গে প্রতি ইউনিটে যোগ হবে ১৫ পয়সা বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের খরচ। আর ছয় শতাংশ উৎসে আয়কর কর্তনের পর প্রতি ইউনিট বাল্ক বিদ্যুতের সরবরাহ মূল্য দাঁড়ায় ৯ টাকা ৪৪ পয়সা। যদিও ওই সময় বাল্ক মূল্যহার ছিল পাঁচ টাকা ৯ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে পিডিবির ঘাটতি তথা লোকসান ছিল চার টাকা ৩৫ পয়সা।

চলতি অর্থবছর বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে (প্রক্ষেপিত) ১০ টাকা ৪৮ পয়সা। তিন শতাংশ ট্রান্সমিশন লস বিবেচনায় এ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি ১০ টাকা ৮০ পয়সা। এর সঙ্গে প্রতি ইউনিটে যোগ হবে ১৫ পয়সা বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের খরচ। আর ছয় শতাংশ উৎসে আয়কর কর্তনের পর প্রতি ইউনিট বাল্ক বিদ্যুতের সরবরাহ মূল্য চলতি অর্থবছর

দাঁড়াবে ১১ টাকা ৫৪ পয়সা। দুই দফা বৃদ্ধির পর বর্তমানে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার দাঁড়িয়েছে ছয় টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে পিডিবির ঘাটতি দাঁড়াবে চার টাকা ৮৪ পয়সা।

এদিকে আগামী অর্থবছর বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে (প্রাক্কলিত) ১০ টাকা ৭৭ পয়সা। তিন শতাংশ ট্রান্সমিশন লস বিবেচনায় এ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি ১১ টাকা ১০ পয়সা। এর সঙ্গে প্রতি ইউনিটে যোগ হবে ১৫ পয়সা বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের খরচ। আর ছয় শতাংশ উৎসে আয়কর কর্তনের পর প্রতি ইউনিট বাল্ক বিদ্যুতের সরবরাহ মূল্য আগামী অর্থবছর দাঁড়াবে ১১ টাকা ৮৫ পয়সা। বর্তমান বাল্ক মূল্যহার (ছয় টাকা ৭০ পয়সা) বিবেচনায় প্রতি ইউনিটে পিডিবির ঘাটতি দাঁড়াবে পাঁচ টাকা ১৫ পয়সা।

অন্যদিকে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যের সঙ্গে যোগ হবে হুইলিং চার্জ ২৯ পয়সা। এছাড়া সাত দশমিক ৯৫ শতাংশ সিস্টেম লস ও এক টাকা ২১ পয়সা বিতরণ চার্জ যোগ হবে। এতে গত অর্থবছর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের সরবরাহ মূল্য দাঁড়ায় ১১ টাকা ৭৮ পয়সা। তবে ওই সময় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্যহার ছিল সাত টাকা ১৩ পয়সা। এতে বিতরণকারী কোম্পানিগুলো প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে লোকসান গুনে চার টাকা ৬৫ পয়সা।

চলতি অর্থবছর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের সরবরাহ মূল্য দাঁড়াবে ১৪ টাকা ছয় পয়সা। আর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম তিন দফা বাড়ানোর পর বর্তমানে গড় মূল্যহার দাঁড়িয়েছে আট টাকা ২৫ পয়সা। এতে বিতরণকারী কোম্পানিগুলো প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে লোকসান গুনবে পাঁচ টাকা ৮১ পয়সা। একইভাবে আগামী অর্থবছর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের সরবরাহ মূল্য দাঁড়াবে ১৪ টাকা ৪০ পয়সা। আর বর্তমান গড় মূল্যহার বিবেচনায় বিতরণকারী কোম্পানিগুলো প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে লোকসান গুনবে ছয় টাকা ১৫ পয়সা।

সূত্র জানায়, বারবার দাম বৃদ্ধির পরও লোকসান না কমার বিষয়ে বৈঠকে জানতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ। এ সময় বৈঠকে উপস্থিত পিডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, সরকার বাল্ক মূল্যহার বাড়ালেও উৎপাদন ব্যয় তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। এর ফলে বাল্ক বা গ্রাহক উভয় পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ালেও ঘাটতি কমানো যাচ্ছে না। বরং জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

তারা আরও জানান, ঘাটতি কমাতে হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ও দাম সমান সমান করতে হবে। প্রতি মাসে পাঁচ শতাংশ হারে দাম বৃদ্ধি করে লোকসান বা ঘাটতি কমানো সম্ভব নয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০