প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ : ভিসা, পাসপোর্ট ছাড়া বিমানে উঠে আলোচনায় আসা শিশু জুনায়েদ মোল্লা বাড়ি ফিরে বাঁধা পড়েছে শিকলে। এর আগেও কাউকে কিছু না বলে চলে যাওয়ায় ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো। চার দিন আগে দাদিকে মাদরাসা যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে ঢাকায় গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে উঠে পড়ে বিমানে। গতকাল বৃহস্পতিবার জুনায়েদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি রুমের মধ্যে খাটের ওপর বসে রয়েছে সে। পায়ে শিকল পরিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর দেয়া হয় ভাত। ভাত খেয়ে জানালা দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে তাকে জুনায়েদ। এমন ঘটনা সে ঘটিয়েছে কিছু বুঝতে পারছে না।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী ইমরান মোল্যার প্রথম পক্ষের ছেলে জুনায়েদ মোল্যা। মা অন্যত্র চলে যাওয়ার পর সৎ মায়ের কাছে বড় হতে থাকে জুনায়েদ। ভর্তি করে দেয়া হয় উজানী হাফিজিয়া মাদরাসায়। এখন ওই মাদরাসার ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। তবে বিভিন্ন সময় বাড়ির কাউকে না বলে বাইরে চলে যায় সে। এবার ঘটিয়েছে অবাক করা কাণ্ড।
জুনায়েদ মোল্যার ছোট চাচা ইউসুফ মোল্যা বলেন, এয়ারপোর্ট থানা থেকে তাকে মোবাইলে ফোন দিয়ে জুনায়েদ সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়ার পর ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয়। তখন তার মা অথবা বাবাকে এসে জুনায়েদকে নিয়ে যেতে বলা হয়। বুধবার রাত ৩টার সময় জুনায়েদকে তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাড়িতে আসার পর আবারও পালিয়ে যায় জুনায়েদ। পরে ওর খালার বাড়ি থেকে তাকে ধরে আনা হয়েছে।
চাচা ইউসুফ মোল্যা আরও জানান, তার ভাতিজা জুনায়েদ খুব দুরন্তপনা। তাকে হাফিজিয়া মাদরাসায় ভর্তি করা হয়েছিল। সেখান থেকে সে বারবার পালিয়ে আসে বলে তাকে বাড়ির পাশে আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে জুনায়েদ ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। তারপরও সে বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে হারিয়ে যায়, আবার একাই ফিরে আসে। এর আগেও সে পালিয়ে ঢাকা, মোংলা, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন জায়গায় গেছে।
জুনায়েদের বাবা ইমরান মোল্যা বলেন, ১৮ মাস বয়সে অভাব-অনটনের কারণে জুনায়েদের মা ওকে ফেলে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। পরে তিনি আবারও বিবাহ করেন। জুনায়েদ ছাড়াও তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তার সৎ মা অন্য ছেলেমেয়ের মতো করে ওকে ভালোবাসে। কিন্তু ছেলেটি সুযোগ পেলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর মনে হচ্ছে, ওর মানসিক সমস্যা হয়েছে। শিগগিরই ওকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
এক প্রশ্নের উত্তরে ইমরান মোল্যা বলেন, চিকিৎসা শেষে ওর পায়ের শিকল খুলে দেয়া হবে। আর তাকে তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা হবে না। পালিয়ে গেলে ঝামেলায় পড়তে হয়, তাই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
