এস এম রুবেল, কক্সবাজার: কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা মাতারবাড়ি ঘেঁষে কোহেলিয়া নদী। এক সময়ের প্রাণচঞ্চল নদীটি নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। এবার ওই নদীর ওপর চোখ পড়েছে ভূমিদস্যুদের। ইতোমধ্যে প্যারাবন কেটে ঘের নির্মাণের কাজ শুরু করেছে প্যারাবন পাহারায় নিয়োজিত আব্বাস উদ্দীন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বনবিভাগের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে যোগসাজশে নির্বিচারে প্যারাবন কেটে কোহেলিয়া ও বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে ফেলছেন। তাদের এসব অবৈধ কাজ বন্ধে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেই বনবিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসনের।জানা গেছে, মাতারবাড়ির উত্তরপাশে ১কোহেলিয়া-সংলগ্ন চরাঞ্চলে প্যারাবন সৃজন করা হয়। প্যারাবন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয় মাতারবাড়ি ইউনিয়নের খন্দারবিল পূর্ব পাড়া গ্রামের আব্বাস উদ্দীন নামের এক ব্যক্তিকে। ওই ব্যক্তিই স্থানীয় কামাল, আজিজ, ইকবালসহ ৭ থেকে ৮ জনের দল নিয়ে প্যারাবনের অঘোষিত মালিক বনে গেছেন। সংরক্ষিত ওই অঞ্চলে ঘর তৈরি করে এবং নির্বিচারে প্যারাবন কেটে মাছের ঘের নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আব্বাস উদ্দীন জানিয়েছেন, তিন বছর আগে উপকূলীয় বনবিভাগ কর্তৃক সৃজিত বাইন গাছগুলো পাহারা দেয়ার জন্য তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। সেই সূত্রে তিনি প্যারাবনটি দখল করে রেখেছেন। প্যারাবন কেটে কেন ঘের নির্মাণ করা হচ্ছে, সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাতারবাড়ি বিট অফিস থেকে মাত্র ২শ গজ দূরে প্যারাবনটির অবস্থান। দিনরাত ওই বন থেকে বাইন গাছ কেটে উজাড় করে চিংড়িঘের নির্মাণের কাজ চললেও তা জানেন না ওই বিট অফিসের কেউ।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, আব্বাস উদ্দীনের সঙ্গে বনবিভাগের লোকজনদের সখ্য রয়েছে। মূলত বনবিভাগের লোকজনদের টাকার বিনিময়ে চুপ করে রাখা হয়েছে। এ প্যারাবন কেটে ঘের নির্মাণের কারণে ছোট হয়ে আসছে কোহেলিয়া।
জানা গেছে, মাতারবাড়ি-সংলগ্ন কোহেলিয়ার অপরপাড়ে মগনামা ইউনিয়ন। ওই এলাকার ছনুয়া রেঞ্জের আওতাধীন উজানটিয়া বনবিটের অধীন কোহেলিয়ার পাড় ঘেঁষে প্যারাবন কাটার হিড়িক চললেও বনবিভাগ সেই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং প্যারাবন কাটার জন্য তাদের সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে জড়িত মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা, উজানটিয়া ও মাতারবাড়ি বিট কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিছুর রহমান এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান, নদীর চর কারও দখলে রাখার সুযোগ নেই। যদি কেউ দখলে রাখেন তাদের উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হবে। পাশাপাশি দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা
নেয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মহেশখালী শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুবক্কর জানান, প্রতি বছর নানা ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। এসব ঘূর্ণিঝড় থেকে প্যারাবনগুলো এখানকার মানুষকে রক্ষা করে। কিন্তু এখন নির্বিচারে সেই প্যারাবনই কাটা হচ্ছে। আর এসব বন্ধে বনবিভাগের ভূমিকা নীরব।