পাহাড়ের কলা দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে

পাহাড়ে উৎপাদিত অর্থকরী ফসলের মধ্যে কলা অন্যতম। এ অঞ্চলে বাংলা, চাঁপা ও দেশীয় সাগরসহ বিভিন্ন জাতের কলার চাষ হচ্ছে বহু বছর ধরে। তবে চাহিদা ও পুষ্টিগুণ বিবেচনায় লাভজনক দেশীয় বাংলা কলা চাষের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি।
গতবছর বান্দরবানের প্রায় আট হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ কলা উৎপাদিত হয়েছে তখন। এ বছর কলাচাষের পরিমাণ আরও বেড়েছে। গতবারের মতো এ বছরও বান্দরবানে কলার বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
কৃষি বিভাগ ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা সদরের সুয়ালক, হলুদিয়া, স্যারণপাড়া, লাইমীপাড়া, ডলুপাড়া, বাঘমারা, কুহালং, রাজবিলাসহ রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ব্যাপকহারে কলা উৎপাদিত হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় কলার চাষের দিকে ঝুঁকছেন স্থানীয় চাষিরা। ইতোমধ্যে কলায় ছেয়ে গেছে বান্দরবানের স্থানীয় হাটবাজারগুলো। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাহাড়িরা কলা বিক্রি করতে নিয়ে আসেন হাটবাজারগুলোয়। তবে সপ্তাহের দু’দিন জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে
পাহাড়ি-বাঙালিরা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসংলগ্ন বান্দরবান বাজারে কলা বিক্রি করেন। সপ্তাহের রোববার ও বুধবার এখানে বসে কলার হাট। হাটবারে পর্যটনের শহরটি পরিণত হয় কলার শহরে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কলা আসতে থাকে হাটে। এখান থেকেই জেলার পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া, দোহাজারি, আমিরাবাদ, পটিয়া, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে পাইকারি দামে কলা কেনে। এরপর সন্ধ্যায় ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে কলা নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। হাটবাজারের দিন কম হলেও সাত থেকে আট ট্রাক ও পিকআপে ভ্যানে করে কলা কিনে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। বাজারে কলা নিয়ে বসার জন্য কৃষকদের ছড়াপ্রতি ট্যাক্স দিতে হয় দুই টাকা। এছাড়া কলা নিয়ে যাওয়ার সময় ব্যবসায়ীদেরও আরেক দফা টোল দিতে হয়।
বাঘমারার কলাচাষি শৈহ্লামং মংথোয়াই চিং বলেন, কলা চাষ খুবই লাভজনক। স্বল্প পুঁজিতে কলা চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। এখানে উৎপাদিত বাংলা কলার চাহিদা রয়েছে। পাহাড়ে তার সাড়ে তিন একর কলাবাগান রয়েছে। বাগানে বাংলা ও চাঁপা কলা রয়েছে সবচেয়ে বেশি। দেশি সাগর কলা গাছও রয়েছে ২০টির মতো। আবাহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। কলা বিক্রি করে এ পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি। তবে বান্দরবানে কলাসহ উৎপাদিত ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। হিমাগারের ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা ব্যবসায়ীদের কাছে তুলনামূলক কম দামে কলা বিক্রি করতে বাধ্য হন।
চিম্বুক পাহাড়ের রিংরং ম্রো বলেন, কলা চাষ করে তার ভাগ্য বদলেছে। বর্তমানে ৯ একর পাহাড়ি জমিতে কলা ছাড়াও মিশ্র ফলের গাছ রয়েছে। ফল বাগানের আয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। দুটি ছেলেকে ভালো স্কুলে পড়ালেখা করাচ্ছেন। বছরে ফল বিক্রি করে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা আয় হয় তার।
কলা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, এখান থেকে কলা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। ছড়াপ্রতি দশ থেকে ২০ টাকা লাভ হয়। তবে গাড়িতে করে কলা নেওয়ার পথে অনেক ছড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের
উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের মাটি ও আবাহাওয়া কলা চাষের উপযোগী। অনেক জাতের হলেও বান্দরবানে মূলত বাংলা ও চাঁপা কলার উৎপাদন বেশি। দুটি জাতের মধ্যে বাংলা কলার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এছাড়া এ জাতের কলাটি বেশি দিন টেকসই থাকে। দ্রুত নষ্ট হয় না।

এমএ শাহরিয়ার

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০