পাহাড়ের ফুলঝাড়ু স্বাবলম্বী করছে নারীদের

বান্দরবানে পাহাড়ে জন্মে উলফুল। প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে ওঠে তা। এরপর এ উলফুল দিয়ে ফুলঝাড়ু তৈরি করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা। এ ফুলঝাড়ু বিক্রি করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছে অনেক নারী।
পাহাড়ের উলফুল ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহার হয়। রাজমিস্ত্রির কাজে ঝাড়– হিসেবে ব্যবহার করায় দেশব্যাপী এর চাহিদাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। স্থানীয় হাটবাজারের চাহিদা মিটিয়ে পাহাড়ের উলফুল ঝাড়– বিক্রি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় সবখানে।
বনবিভাগের মতে, চাহিদা থাকায় জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানছি, লামা, আলীকদম ও সদর উপজেলার মাঝেরপাড়া, রেইছা, বাঘমারা, ডলুপাড়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাহাড়ের
উলফুল সংগ্রহ করে পাহাড়ি-বাঙালি নিম্ন আয়ের নারী-পুরুষেরা। পাহাড়ের বন-জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা উলফুলের মোছা বানিয়ে ঝাড়– হিসেবে প্রতিদিন স্থানীয় হাটবাজারগুলোয় বিক্রি করে শ্রমজীবী মানুষেরা। পাহাড়ি জুমিয়া পরিবারের নারীরাও পাহাড়ে জুমচাষ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পাহাড় থেকে ফুলঝাড়– সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারগুলোয় বিক্রি করে নিয়মিত। স্থানীয় পাহাড়ি নারীরা সংসারে বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে একে বেছে নিয়েছে।
রুমা সড়কের কমলা বাগান পাড়ার বাসিন্দার রেংরিং ম্রো ও লিয়ামরি ম্রো বলেন, পাহাড় থেকে ফুলঝাড়– কেটে মোছা তৈরি করে রাস্তার পাশের বাজারে বিক্রি করি। ফুলের ২০ থেকে ২৫টি কঞ্চি দিয়ে তৈরি করা হয় একেকটি ফুলঝাড়– মোছা। প্রতিটি মোছা সাত থেকে আট টাকায় বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। পাহাড় থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি ঝাড়–র মোছা সংগ্রহ করা সম্ভব। এগুলো বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আয় হয় আমাদের।
জেলার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালিদের কাছ থেকে পাইকারি দামে উলফুল কিনে রোদে শুকিয়ে মোছা বানিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে সরবরাহ করে কয়েকজন ব্যবসায়ী। বাজারে প্রতি হাজার ফুলঝাড়ুর কঞ্চি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় কেনাবেচা হয়। প্রতিদিন একজন শ্রমজীবী মানুষ পাহাড় থেকে এক হাজার থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত ফুলঝাড়ুর কঞ্চি কেটে সংগ্রহ করতে পারে, যা দিয়ে প্রায় ৪০০ টাকা আয় করা যায়। স্থানীয় হাটবাজারে প্রতিটি ফুলঝাড়ুর মোছা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। আর চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।
ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মাহাবুব বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর ধরে পাহাড়ের নিম্ন আয়ের মানুষের কাছ থেকে পাইকারি দামে ফুলঝাড়ু কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামে বিক্রি করি। ১৯৯৮ সালে প্রথম ঝাড়ু ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার অধীনে দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ফুলঝাড়ু রোদে শুকানো ও মোছা বানানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে পাহাড়ের মানুষের আর্থিক সংকট নিরসনে ফুলঝাড়ু সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে। ঝাড়– ব্যবসায়ী শৈখ আহমেদ বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে একটি কাঁচা ফুলঝাড়–র মোছা সাত থেকে আট টাকায় কিনি। পরে রোদে শুকিয়ে শ্রমিক দিয়ে নতুনভাবে ঝাড়–র মোছা বানিয়ে গাড়িতে করে ঢাকা-চট্টগ্রামে নিয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করি। এ ঝাড়ু ব্যবসা করে তার মতো আরও অনেকে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন।
ঝাড়ু শ্রমিক মাসুমা আক্তার, সালমা খাতুনসহ কয়েকজন বলেন, পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা ফুলঝাড়ুর মোছা তৈরি করি আমরা। মোছা বানিয়ে দিনে দেড়শ থেকে আড়াইশ টাকা পান তারা। এই টাকা দিয়ে তাদের সংসার ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চলে।
বান্দরবান বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ দাশ বলেন, পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাকে জন্মানো উলফুল ফুলঝাড়– হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আর্থিক সংকট নিরসনে এ ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখছে। ফুলঝাড়ু বিক্রি করে বান্দরবানে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ।

এমএ শাহরিয়ার, বান্দরবান

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০