পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখুন: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সৌহার্দ্য বজায় রাখার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চিত করুন যে পাহাড়ে শান্তি বজায় থাকবে… আমরা তা চাই। সবার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখা আবশ্যক। এটা গুরুত্বপূর্ণ নয় কে পাহাড়ি, কে বাঙালি।’
গতকাল গণভবনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার হাতে তুলে দেন। ওই অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরিশাল ও বান্দরবান জেলার সঙ্গে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাহাড়ি ও বাঙালি সবাই মানুষ। প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার আছে। মানুষের এই মৌলিক অধিকার পূরণ করতে হবে আমাদের।’
উল্লেখ্য, গত কয়েক দিন বেশ কিছু হত্যার ঘটনায় অশান্ত হয়ে ওঠে পার্বত্য অঞ্চল। গত শুক্রবার গুলিতে নিহত রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন পাঁচজন। এ ঘটনায় আহত হন অন্তত তিনজন। শক্তিমান চাকমাকে গত বৃহস্পতিবার নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তিনি জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ছিলেন।
এদিকে গতকাল আরেক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবেলায় ঘরে ঘরে খাদ্যের আপদকালীন মজুদ গড়তে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পারিবারিক সাইলো বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যটা যেন থাকে, যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্য মজুদটা যেন নিশ্চিত থাকে। যাতে কোনোমতেই আমরা খাদ্য ঘাটতিতে না পড়ি কখনও। আজকে যে উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছে, আমি মনে করি যুগান্তকারী উদ্যোগ। কারণ প্রত্যেকটা পরিবার যেন একটা আপদকালীন মজুদ রাখতে পারে সেই ব্যবস্থাটা নেওয়া উচিত।’
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের আওতায় দেশের দুর্যোগপ্রবণ ১৯টি জেলার ৬৩ উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষকে পারিবারিক সাইলো দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঝালকাঠির তিনটি পরিবারের মাধ্যমে সাইলো বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ৫৬ কেজি চাল ধারণক্ষমতার পারিবারিক এ সাইলোর নির্মাণমূল্য এক হাজার ৩৭৭ টাকা হলেও এটি বিতরণ করা হচ্ছে ৮০ টাকা মূল্যে। বাতাস ও পানিরোধক হওয়ায় দুর্যোগের সময় এই সাইলোর মধ্যে শুকনো খাবার রাখলেও তা নষ্ট হবে না। এছাড়া বীজও সংরক্ষণ করা যাবে এতে।
সাইলো উদ্বোধন করতে গিয়ে শেখ হাসিনা এক সময় দেশের অনাহার-অর্ধাহারে থাকা মানুষের দুর্দশার কথা তুলে করেন। তবে সেই অবস্থা কাটিয়ে তার নেতৃত্বাধীন প্রথম সরকারের (১৯৯৬-২০০১) সময় দেশকে ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ’ করার কথাও তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী সারের দাম কমানো ও ভর্তুকি দেয়া, কৃষকদের ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দেওয়া, কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণসহ তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে খাদ্য উৎপাদন প্রধান অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগের সঙ্গে ওইসব অঞ্চলে আধুনিক চালকলসহ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার ওপরও জোর দেন তিনি।
শিক্ষিতদের কৃষিকাজে সম্পৃক্ত হওয়ারও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কৃষি কাজটাকে যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে। যেহেতু আমরা এখন শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আর শিক্ষিত হয়ে গেলে অনেকে আবার ক্ষেতে নামতে চায় না। আমি কয়েকদিন আগেই একটা চিন্তা করছিলাম যে, আমাদের একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সেটা হলো প্রত্যেক স্কুল-কলেজের ছাত্রদের বিশেষ করে কলেজ ছাত্রদের যখন ধান তোলার সময় তাদের নামানো যে, এই ধান কাটা… এর সঙ্গে তাদের একটা সম্পৃক্ততা রাখা।’
‘কেউ যেন কৃষিকাজবিমুখ না হয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আর শিক্ষিত হয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও ভালোভাবে যেন কৃষিকাজ করতে পারে, বাপ-মার কাজে সাহায্য করতে পারে সেভাবেই তাদের মানসিকতাটা গড়ে তুলতে হবে। সেভাবেই শিক্ষার সঙ্গে থাকা উচিত। সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়নও আমরা করব। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী ঝালকাঠির প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১