সাইফ ইউ আলম: সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের দুর্নিবার আকর্ষণ রয়েছে। সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষ তাই প্রতিনিয়ত খুঁজে বেড়ায় সৌন্দর্যের ভাণ্ডার। এমনই একটি সুন্দর স্থান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এখানে প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয়তন ১৭৫৪ একর। এর ৭২ শতাংশজুড়ে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা। ৩০ শতাংশ পাহাড়ের উচ্চতা ৭০ মিটারের বেশি। বাকি পাহাড়ের উচ্চতা ৪০ মিটার। এ ধরনের পাহাড়ি অঞ্চলকে আধা চিরসবুজ বনভূমি বলা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইন্দো-বাংলা বায়ো-ডাইভারসিটি হটস্পটের অন্যতম অংশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে বর্তমানে ১৭৬ প্রজাতির পাখি আছে। দেশের বিলুপ্তপ্রায় ২৩ ধরনের পাখির ২০ শতাংশের অভয়ারণ্য এ ক্যাম্পাস।
সর্বশেষ জরিপে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেসব পাখির উপস্থিতি লক্ষ করা যায় সেগুলো হচ্ছেÑবড় বক, গুলিন্দা বাটান, ল্যাঙ্গাচ্যাগা, কালটুপি মাছরাঙা, নীলকান মাছরাঙা, কোকিল, লম্বা পা তিসাবাজ, মাছ মুরাল ঈগল, নীলগলা বসন্ত, লালপেট কাঠবিড়ালি, ঠোঁট মোটা ফুলঝুরি, বড় র্যাকেট ফিঙে, সাদামাটা নাঝুটি, মেটেখতন, জলপাই পিঠখতন, ধলালেজ শিলা ফিন্দা, কালাঘাড় বেনে বউ, তামাং বেনে বউ, ছাতি ঘুরানি, গলাফোলা ছাতারে, লালপাছা ফিঙে, লালপেট ছাতারে, দেশি ধলাচোখ, ছোট পানকৌড়ি, ইউরোপীয় নর্দান পিনটেইন, হুতোম পেঁচা, চীনা মান্দারিন ডাক, সাইবেরিয়ান কম্ব ডাক, পাহাড়ি নিমপেঁচা, লক্ষ্মীপেঁচা ও বাঁদি হাঁস প্রভৃতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত ৬৬৫ প্রজাতির উদ্ভিদ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, ৯০ দশকের পর থেকে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক বৃক্ষ রোপণ করা হয়। স্থলজ উদ্ভিদের প্রজাতি সংখ্যা নির্ধারণ করা গেলেও জলজ উদ্ভিদের সঠিক পরিসংখ্যান নির্ণয় সম্ভব হয়নি। শৈবাল, মস, আকাশমনি, কড়ই, রাজ কড়ই, ছাতনী, কদম, নিম, শিমুল, ওয়েপাম, ইউক্যালিপটাস, গামার, জারুল, ক্লোরাফাইটা, ক্রাইসোফাইটা, জিওফাইটা, গুল্মলতা, ঔষধি গাছপালার পাশাপাশি নানা প্রজাতির ফুল রয়েছে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, বেল, পেয়ারা, নারিকেল, সুপারি, গাব, বরইসহ নানা ফলের গাছের সমাহার ও ঔষধি গাছ চাল মাগুর, কনাকু, মুস, বাজান, বক্সবন্দ, নিভিট, টালি, ডারমারা, চুকুয়া প্রভৃতিতে সবুজ চবি ক্যাম্পাস।
এখানে ১৬৬ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। নানা প্রজাতির অর্কিড নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটি অর্কিডেরিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬০ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় অর্কিড।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের একদল গবেষক ইউলোপিয়া জেনিকাল্টা, জিও ডোরাম ডেনসি ক্লোরাম, লিপোরিস নারভোসা, ম্যালাক্সিস অকুমিনাপ্টা ও লুসিয়া মাইক্রেনতা প্রজাতির পাঁচটি দুষ্পাপ্য প্রজাতির অর্কিড খুঁজে বের করেছেন।
ক্যাম্পাসের পাহাড় ও বনাঞ্চলগুলোয় রয়েছে মায়া হরিণ, বন্যশূকর, বানর, সজারু, সাম্বার, চিতা বিড়াল, শিয়াল, খেঁকশিয়াল, অজগর, গোখরাসহ নানান প্রজাতির সাপ, বক, পাতিহাঁস, ডুবুরি, সারস, পানকৌড়ি প্রভৃতির বাস। তবে সচেতনতার অভাবে এসব প্রাণির দীর্ঘদিনের নিরাপদ আবাসভূমি হয়ে উঠছে অনিরাপদ। এজন্য উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট পাখিবিদ ও উদ্ভিদবিদরা।
সাংবাদিক
Add Comment