পাহাড় টিলা ছড়া আর বন্যপ্রাণীর কাছে

চোখ জুড়ানো সবুজ আর স্বচ্ছ জলরাশির কলতান রাঙামাটির কাপ্তাই ঘিরে। বিশাল বিশাল পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি হওয়া উঁচু-নিচু বাঁকা সড়ক মন জুড়িয়ে দেয়। তবে পাহাড়ি এলাকার কারণে কিছু স্থানে সন্ধ্যার পর সাবধানে চলাফেরা করা উচিত। সবুজ আর পাহাড়ের ভাঁজে প্রবাহিত জলরাশির কাপ্তাই ঘুরে এসে গল্প শোনাচ্ছেন মাঝহারুল ইসলাম সবুজ

কাপ্তাই শহরে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ফরেস্ট অফিস রিজার্ভ এরিয়া, চিৎমরম (দুটি বৌদ্ধমন্দির), কর্নফুলী পেপার মিলস (কেপিএম) রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া, নেভি ক্যাম্প, আর্মি ক্যাম্প, কাপ্তাই রাঙামাটি লিংক রোড, কাপ্তাই ব্যারাজ ও পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র।

 

ফরেস্ট অফিস রিজার্ভ এরিয়া

এলাকাটি ফরেস্ট অফিস, স্টাফ কোয়ার্টার, বিএফডিসি বাংলো ও রিজার্ভ এরিয়া মিলে। প্রথমদিন সেখানে ঘোরাঘুরি করতে পারেন। সমতল থেকে প্রায় ৮০-৯০ মিটার উঁচু টিলার ওপর এর অবস্থান। সারি সারি গরান, শিলকড়ই, মেহগনি, আমসহ নানা ফলের গাছ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এ এলাকায় বেড়ানোর সময় অবশ্যই বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।

 

চিৎমরম

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আবাসস্থল। বৌদ্ধদের পাশাপাশি মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান একসঙ্গে বছরের পর বছর ধরে এখানে বসবাস করছে। রাস্তার পাশে যে কোনো ঘাট থেকে নৌকায় পার হয়ে যেতে হয় চিৎমরম এলাকায়। ছিমছাম মনোরম পাহাড়ি পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে দুটি বৌদ্ধমন্দির। বহু ধাপের সিঁড়ি বেয়ে শালীনতা ও মন্দিরের পবিত্রতা বজার রেখে ঘুরতে হবে।

 

কেপিএম রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া

কাগজের মণ্ড ও কাঁচামাল প্রক্রিয়া দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন কেপিএম রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া থেকে। আর এলাকাজুড়ে ইউকিলিপটাস গাছের ছায়ায় বসে উপভোগ করতে পারবেন হালকা স্রোতে বয়ে চলা কর্ণফুলীকে। এলাকাটিতে প্রবেশের সময় নাম নিবন্ধন করতে হয়।

 

নেভি ক্যাম্প

নেভি ক্যাম্প শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। হেঁটে যেতে পারেন। সিএনজিতেও যাওয়া যায়। সেখানে যাওয়ার পথ অসম্ভব সুন্দর। আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথ। পিচঢালা পথের পাশ হয়ে উঠে গেছে সবুজে মোড়া পাহাড়। এখানের ঘরগুলো গাছের ওপরে কাঠের। সেখান থেকে পাহাড়ের পাশে কাপ্তাই হ্রদের পানির ওপর সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার বন্দোবস্ত রয়েছে। এছাড়া ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখে নিতে পারেন কাপ্তাই হ্রদের কিছু অংশ। ছোট ঝিলের পাশে আছে এলিফ্যান্ট পয়েন্ট। এই পয়েন্ট ও আশপাশের এলাকায় প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় বুনোহাতির দেখা মেলে।

 

আর্মি ক্যাম্প

নেভি ক্যাম্পের রাস্তা ধরে কিছুদূর গেলে আর্মি ক্যাম্প। ক্যাম্পের আশপাশে অনেক সুন্দর সুন্দর স্থান রয়েছে। এখান থেকে উপভোগ করতে পারবেন কাপ্তাই হ্রদের বিশালতা ও সৌন্দর্য। সবুজ অথবা নীলচে গালিচার ওপর বিছিয়ে রাখা সবুজ রঙের ছোট ছোট গাছ ও মাটির ঢিবি। দূর থেকে হ্রদের এমন ছবি মানসপটে গেঁথে রাখার মতো।

 

কাপ্তাই-রাঙামাটি লিংক রোড

এটি আমার দেখা বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর সড়ক। রাস্তার খুব নিকটেই দেখা যায় খাড়া পাহাড়। রাস্তায় ভয়ঙ্কর বাঁকগুলোর আদুরে নাম হলো ‘আচমকা মোড়’। এ রাস্তায় প্রায় আচমকা মোড় দেখতে পাবেন। এই রাস্তা দিয়েই রাঙামাটি শহরের একমাত্র ঝুলন্ত ব্রিজ ঘুরে আসা যায়।

 

কাপ্তাই ব্যারাজ ও পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র

বিশেষ অনুমতি ছাড়া পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রবেশ করা যায় না। তবে ব্যারাজ এলাকা ঘুরে দেখতে পারবেন। রাতে ব্যারাজ এলাকা সাজ থাকে বৈচিত্র্যপূর্ণ। সারি সারি হলুদ ল্যাম্পপোস্ট, কর্ণফুলী নদীর বেঁধে রাখা জলরাশি।

কাপ্তাই শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করতে পারে সহজেই। শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট টিলা, জলের শব্দ ছড়িয়ে বয়ে চলা ছড়াগুলোও খুব সুন্দর।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০