ইসমাইল আলী: সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে ইউনাইটেড গ্রুপ। এ জন্য পায়রা পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে প্রস্তাব জমা দিয়েছে কোম্পানিটি। ১৫০ মেগাওয়াটের ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনায় ব্যয় হবে ইউনিটপ্রতি ৮ টাকা ৯৫ পয়সা।
পায়রা বন্দরের চাহিদা মেটানোর জন্য বিল্ড ওন অপারেট (বিওও) ভিত্তিতে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ২৭ ডিসেম্বর যৌথ প্রস্তাব জমা দেয় পায়রা পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। এতে দুই কোম্পানির অংশীদারিত্ব যথাক্রমে চার দশমিক ৯৯ ও ৯৫ দশমিক শূন্য এক শতাংশ। পরে যাচাই-বাছাইয়ে গত ৯ জানুয়ারি প্রস্তাবটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) পাঠানো হয়।
প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে সম্প্রতি তা অনুমোদনের জন্য পিডিবির বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হয়। এতে দেখা যায়, বিওও ভিত্তিতে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে জমি দেবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর এতে বিনিয়োগ করবে ইউনাইটেড পাওয়ার ও পায়রা পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ২২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ তথা ৩০৬ কোটি ৭৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করবে দুই কোম্পানি। আর ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৭০ শতাংশ তথা ৭১৫ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এ-সংক্রান্ত সিন্ডিকেট ঋণ সংগ্রহ করবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ১৫ মাস। আর নির্মাণ-পরবর্তী ১৫ বছর বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে কেন্দ্রটি থেকে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ কেনায় প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টার দাম পড়বে আট টাকা ৯৫ পয়সা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের ১৫ কোটি ডলারের ইকুইটি থাকতে হবে। যদিও ইউনাইটেড পাওয়ারের ইকুইটির পরিমাণ ৬৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। আবার শর্ত ছিল, আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সম্পদ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ইউনাইটেড পাওয়ারের সম্পদের পরিমাণ ৯৮ কোটি ডলার। এর বাইরে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনার অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। যদিও ইউনাইটেড পাওয়ারের অভিজ্ঞতা রয়েছে ২৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনার।
সব ধরনের যোগ্যতা থাকায় ইউনাইটেড পাওয়ার ও পায়রা পাওয়ার জেনারেশন কনসোর্টিয়ামকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে যোগ্য হিসেবে বিবেচনার প্রস্তাব করেন পিডিবির আইপিপি সেল-১-এর পরিচালক মো. ফজলুল হক। আর এ প্রস্তাবে সমর্থন করেন পিডিবির সদস্য কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফার্নেস অয়েল দ্বারা পরিচালিত সরকার কর্তৃক বিদ্যুতে বিক্রিমূল্য চার টাকা ৮৫ পয়সা। তবে এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ কেনায় ব্যয় হবে আট টাকা ৯৫ পয়সা। অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ঘাটতি হবে চার টাকা ১০ পয়সা। ফলে ১৫ বছরে কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনায় সম্ভাব্য ঘাটতি হবে ছয় হাজার ৪৬৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সরকারকে এ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দিতে হবে।
এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন প্রণয়ন ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে জমির মালিকানা নির্দিষ্টকরণ, তরল জ্বালানি পরিবহন নিশ্চিতকরণ ও স্পন্সরের নিজ খরচে ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করতে হবে।
জানতে চাইলে পিডিবির আইপিপি সেল-১-এর পরিচালক মো. ফজলুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে সব ধরনের যোগ্যতা রয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার ও পায়রা পাওয়ার জেনারেশন কনসোর্টিয়ামের। এজন্য কতিপয় শর্তে তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে।
