নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলা এড়াতে হবে। এজন্য দেশে বিদ্যমান বিনিয়োগ নীতিমালা সংস্কার করা প্রয়োজন। অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় বিধিবিধান বাদ দিয়ে সেবার মান বাড়াতে হবে। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বেসরকারি খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা গতকাল শনিবার এ পরামর্শ দিয়েছেন।
‘ব্যবসায় পরিবেশের উন্নয়ন: প্রধান প্রধান নীতি সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রাধিকার’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। এতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থিত থাকলেও এ পরামর্শের বিষয়ে কোনো মতামত দেননি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের ওয়ান স্টপ সার্ভিস (এক দরজায় সব সেবা) দেওয়ার ওয়াদা করা হচ্ছে। কিন্তু কখনোই এখানে-ওয়ান স্টপ সেবা ছিল না। এবার ওয়ান স্টপ সার্ভিস দেওয়ার বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদারকিতে আছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কাজ করছে।
পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশ ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম অবস্থানে আছে। বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার গড় হারের অর্ধেকের কম। বিনিয়োগ বাড়াতে সেবার মান বাড়াতে হবে। ডুয়িং বিজনেস র্যাংকিংয়ে এগোতে হবে। অপ্রয়োজনীয় বিধিবিধান বাদ দিয়ে বেজা, বিদ্যুৎ বিভাগসহ বিনিয়োগের প্রধান প্রধান দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। সরকার ২০৪০-এর দশকের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার যে পরিকল্পনা করেছে, তা বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ দরকার। এক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ পর্যাপ্ত পরিমাণে হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির তুলনায় স্থবির হয়ে আছে। আর বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়লে বর্ধিত চাহিদার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে না। তাই বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
এ সময় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, এমসিসিআইয়ের সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) নির্বাহী সদস্য এমদাদুল হক, সাবেক বাণিজ্য সচিব সোহেল চৌধুরী, আবদুল মোনেম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুদ্দীন মোনেম, বিল্ডের সিইও ফেরদৌস আরা বেগম, আইএফসি মাশরুর রিয়াজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন না করলে এ দেশে আরও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। বিনিয়োগ টানতে হলে ডলারের রঙ দেখা ঠিক হবে না। এফডিআইয়ের জন্য মানসিকতা বদলাতে হবে। কোন দেশ থেকে কী রঙের (কালো না সাদা) অর্থ আসছে, সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে কোন খাতে বিনিয়োগ হবে, কত কর্মসংস্থান হবে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
তিনি অন্য দেশের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও মরিশাস থেকে বিনিয়োগ আসছে ভারতে। এরকম বিনিয়োগ বাংলাদেশে এলে তাতে অসুবিধা আছে কি না, তা ভেবে দেখা যেতে পারে। এফডিআই বাড়ানোর জন্য তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ আছে, এমন বহুজাতিক কোম্পানিকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর নিয়োগ এবং নির্দিষ্ট দেশের সঙ্গে সমঝোতা বাড়ানোর পরামর্শও দেন।
বিডা চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, বিডা শুধু এফডিআই নয়, সামগ্রিক বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করছে। বিনিয়োগ উন্নয়নের জন্য সেবার মান বাড়ানো ও নীতিতে সংস্কার আনা হবে। এফডিআই বিষয়ে সর্বোচ্চ শিথিলতা দেখানো হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষাবিদ, গবেষক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা থাকবেন। বিদেশিদের ভিসা সহজ করার জন্য ই-পাসপোর্ট ও ই-ভিসা পদ্ধতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক বাছাই করা প্রয়োজন। যেসব ক্ষেত্রে দেশি কোম্পানিগুলো ভালো করছে, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগের দরকার নেই। যেসব বিদেশি বিনিয়োগে কর্মসংস্থান বেশি হবে বা যেসব বিদেশি বিনিয়োগ থেকে বাংলাদেশ কিছু শিখতে পারবে, সেগুলোর ওপরই জোর দিতে হবে। উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেওয়ার জন্য বিডাকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিতে হবে। বিডার কর্মকর্তাদের মধ্যেও দক্ষতা বাড়াতে হবে। বিডার পলিটিক্যাল উইল থাকতে হবে। বিডা স্বাধীনভাবে অর্থনৈতিক ও কারিগরি দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। গোষ্ঠীস্বার্থের বাইরে থাকতে হবে। এমসিসিআইয়ের সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার জন্য বিডাকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এজন্য জনবল ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস দিতে হবে।
পিআরআইর সেমিনার: বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন না তোলার পরামর্শ

Add Comment