পিই রেশিও বিবেচনায় বিনিয়োগ এগিয়ে ব্যাংক পিছিয়ে পাট

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে বর্তমানে কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় পুঁজিবাজার। বিনিয়োগের উপয়োগী শেয়ার রয়েছে অনেকগুলো। এর মধ্যে শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিওর বিবেচনায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ব্যাংকিং খাত। অন্যদিকে পিই রেশিওর ভিত্তিতে পিছিয়ে রয়েছে পাট খাতের কোম্পানিগুলো। অর্থাৎ বিনিয়োগের দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পাট খাত।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় পিই রেশিও ১৬ দশমিক ২০ পয়েন্ট। আর খাত ভিত্তিক পিইর হিসাবে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকিং খাত। বর্তমানে এ খাতের পিই অবস্থান করছে ১০ দশমিক এক পয়েন্টে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত।
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, ব্যাংকিং খাতে পিই কম থাকার কারণ হচ্ছে ২০১০ সালের পর থেকে এ খাতের শেয়ারের দর অস্বাভাবিকহারে কমে যাওয়া। সেই সময় তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দরপতন হয়ে তলানিতে চলে যায়। যার জের ধরে কমে যায় শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতও। তাদের মতে, ব্যাংক হচ্ছে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী খাত। সেজন্য এ খাতে বিনিয়োগ অন্য যে কোনো খাতের চেয়ে এগিয়ে থাকে। সম্প্রতি অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারে দর বাড়লেও এখনও এসব শেয়ার অতিমূল্যায়িত নয় বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির পিই কম রয়েছে সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ এমনিতেই নিরাপদ। এক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাংককে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। কারণ এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে ঝুঁকিমুক্ত। তাছাড়া এ খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান শেয়ারহোল্ডারদের ভালো রিটার্ন দেয়। একই বিষয়ে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের উচিত ওইসব শেয়ারে বিনিয়োগ করা যে সব কোম্পানি থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারেন। আর এটি নির্ধারণে শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।
অন্যদিকে পাট খাতের পিই অধিক প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, এ খাতে কোম্পানি সংখ্যা মাত্র তিনটি। এরমধ্যে দুটির অবস্থা অপেক্ষাকৃত নাজুক। কোম্পানি দুটির শেয়ারও অতিমূল্যায়িত। যে কারণে এ খাতটির গড় পিই রেশিও বেশি। বর্তমানে যা ২১৭।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে পিই রেশিও ১৫ এর মধ্যে থাকলে সেই কোম্পানিকে বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ভাবা হয়। পিই ১৫-এর ওপরে চলে গেলে ক্রমেই বিনিযোগ ঝুঁকিতে পড়ে যায়। তাই বিনিয়োগ ঝুঁকি এড়াতে কম পিই সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে যেসব কোম্পানির পিই ৪০-এর ওপরে চলে যায় সেসব শেয়ারের বিপরীতে মার্জিন ঋণ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কারণ এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে ঝুঁকিতে পড়বেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে তালিকাভুক্ত অন্যান্য খাতের মধ্যে বর্তমানে সিমেন্ট খাতের পিই ২৫ দশমিক ৪ পয়েন্টে, সিরামিক খাতের ২১ দশমিক ৭ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতের ২২ দশমিক ৩ পয়েন্টে, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২২ দশমিক ৭ পয়েন্টে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ১২ দশমিক ৪ পয়েন্টে, সাধারণ বিমা খাত ১৪ দশমিক ৯ পয়েন্টে, তথ্য ও প্রযুক্তি খাত ২৮ দশমিক ৫ পয়েন্টে।
এছাড়া বিবিধ খাতের পিই ২৮ দশমিক ৫ পয়েন্টে, এনবিএফআই খাত ২৭ পয়েন্টে, কাগজ খাত ৬৪ দশমিক ৪ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়ন খাত ১৭ দশমিক ৩ পয়েন্টে, সেবা ও আবাসন খাত ১৯ দশমিক ৪ পয়েন্টে, চামড়া খাত ১৮ দশমিক ৪ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাত ২২ দশমিক ৬ পয়েন্টে, বস্ত্র খাত ১৭ দশমিক ৬ পয়েন্টে এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের পিই ২৫ দশমিক ২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০