ইসমাইল আলী: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমছে। গতকাল নিট রিজার্ভ নেমে গেছে ১৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। এর মধ্যে ডলার সংকটে কয়লা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। কয়লা ও গ্যাস সংকটে প্রায়ই বসে থাকে বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে দেশব্যাপী চলছে লোডশেডিং। এছাড়া বকেয়া পড়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের ঋণের কিস্তি। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিলও নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ডলার সংকটে ঝুঁকিতে পড়েছে বিদ্যুৎ খাত।
আগামী মাস (জুন) পর্যন্ত বিভিন্ন খাতের দায় পরিশোধে তিন বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)। সংস্থাটির এক হিসাবে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, পিডিবির সর্বোচ্চ দায় বর্তমানে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে। এরপর রয়েছে কয়লা আমদানির বিল, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের কিস্তি, পিডিবির নিজস্ব আট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের কিস্তি এবং পিডিবির বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যন্ত্রাংশ কেনার বিল।
পিডিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বাবদ পরিশোধ করতে হবে এক দশমিক ৭১৭ বিলিয়ন ডলার। বেসরকারি খাতের চারটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানির বিল বাবদ পরিশোধ করতে হবে ৮৬২ মিলিয়ন ডলার। পিডিবির নির্মিত আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের কিস্তি পরিশোধ বাবদ দিতে হবে ১১৫ মিলিয়ন ডলার। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের কিস্তি পরিশোধে দিতে হবে ২২৬ মিলিয়ন ডলার এবং পিডিবির বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশ ক্রয় বাবদ পরিশোধ করতে হবে ৮৪ মিলিয়ন ডলার।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পিডিবির বকেয়া ছিল প্রায় ৮৬৯ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া ছিল ৭৪৩ মিলিয়ন ডলার ও কয়লা আমদানির বিল বকেয়া ১২৬ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রামপালের কয়লা আমদানির বিল বকেয়া ছিল ৪৫ মিলিয়ন ডলার ও এসএস পাওয়ারের ৮১ মিলিয়ন ডলার। চলতি বছর জানুয়ারিতে বকেয়া পড়েছে ২৭১ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ডলার ও ফেব্রুয়ারিতে ৩০০ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া মার্চের জন্য লাগবে ৪২২ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ডলার, এপ্রিলে ৩৩৪ মিলিয়ন, মে মাসে ৩১৮ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ও জুনে ৪৮৭ মিলিয়ন ডলার।
মাসভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদ্যুৎ আমদানির বিল জানুয়ারির জন্য দিতে হবে ১৪৪ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলার, ফেব্রুয়ারির ১৬০ দশমিক ০৫ মিলিয়ন, মার্চের ১৬৯ দশমিক ৬২ মিলিয়ন, এপ্রিলের ১৭১ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন, মে’র ১৬৫ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ও জুনের ১৬৩ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার। বিদ্যুৎ আমদানির বিলের মাঝে আদানির বিলও রয়েছে। কয়লা আমদানির বিল দিতে হবে জানুয়ারির ১০২ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলার, ফেব্রুয়ারির ১০৮ দশমিক ৮০ মিলিয়ন, মার্চের ১৩৪ দশমিক ৯২ মিলিয়ন, এপ্রিলের ১৩০ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন, মে’র ১৩১ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ও জুনের ১২৭ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন ডলার।
কয়লা আমদানির বিলের মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের রয়েছে ২৯৩ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ডলার, রামপালের জন্য দরকার ২০৩ দশমিক ৪০ মিলিয়ন, এসএস পাওয়ারের ১৫৯ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ও বরিশাল ইলেকট্রিকের প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার। এর বাইরে পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কিস্তি দিতে হবে মার্চের ৮৬ মিলিয়ন ডলার ও জুনের ১৪০ মিলিয়ন ডলার।
পিডিবির আট কেন্দ্রের ঋণের কিস্তি জানুয়ারির জন্য পরিশোধ করতে হবে ২৪ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলার, ফেব্রুয়ারির ১৮ দশমিক ৩০ মিলিয়ন, মার্চের ১৭ দশমিক ১৯ মিলিয়ন, এপ্রিলের ১৭ দশমিক ১৫ মিলিয়ন, মে’র ছয় দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ও জুনের ৩১ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর যন্ত্রপাতি কেনার জন্য জানুয়ারির বিল বকেয়া পড়েছে ১৩ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১৫ মিলিয়ন করে মোট ৬০ মিলিয়ন ডলার ও জুনে ২৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে।
জানতে চাইলে পিডিবির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডলার সংকটে কয়লা, জ্বালানি তেল ও গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে না পারায় গত অর্থবছর থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য নিয়মিতই লোডশেডিং হচ্ছে। তবে বকেয়া বিল দ্রুত পরিশোধ করতে না পারলে আগামীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এজন্য বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।