Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 5:24 am

পিডিবির বকেয়া দায় বেড়ে ৪১ হাজার কোটি টাকা!

ইসমাইল আলী: উচ্চ দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিক্রি করায় নিয়মিত লোকসান গুনছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে প্রতি মাসে সংস্থাটির ঘাটতি থাকছে গড়ে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি। এ ঘাটতি মেটাতে প্রতি মাসে প্রচুর ভর্তুকি দরকার হয়। তবে ভর্তুকি নিয়মিত ছাড় করছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল পরিশোধ করতে পারছে না পিডিবি।

এদিকে তহবিল সংকটে ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আবার পেট্রোবাংলার বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাসের বিলও আটকে গেছে। সব মিলিয়ে গত জানুয়ারি পর্যন্ত পিডিবির কাছে বিভিন্ন সংস্থার পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে নিয়মিত ভর্তুকি ছাড় না করায় প্রতি মাসে বাড়ছে পিডিবির দেনা। এজন্য দ্রুত ভর্তুকির অর্থ ছাড় করার জন্য অনুরোধ করেছে সংস্থাটি।

বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো পিডিবির চিঠিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে খাতভিত্তিক বকেয়ার হিসাব বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। চিঠির তথ্যমতে, গত জানুয়ারি পর্যন্ত আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) ও রেন্টাল ফার্নেস অয়েল, গ্যাস ও সৌর বিদ্যুতের কেন্দ্রগুলোর বিল বকেয়া পড়েছে ১৫ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। কয়লাভিত্তিক বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর বিল বকেয়া পড়েছে ছয় হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। ভারতের আদানির বিল বকেয়া পড়েছে চার হাজার ১৪০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া রয়েছে এক হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের বাইরে বিভিন্ন সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিলও বকেয়া পড়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত এর পরিমাণ ৯ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। এর বাইরে পেট্রোবাংলার আওতাধীন বিভিন্ন গ্যাস কোম্পানির কাছ থেকে কেনা পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাসের বিল বকেয়া পড়েছে তিন হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গত জানুয়ারি পর্যন্ত মোট বকেয়া ছিল ৪১ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, পিডিবির প্রতি মাসে গড় বিল পরিশোধ করতে হয় আট হাজার ৭০০ কোটি থেকে আট হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবে গড়ে রাজস্ব আয় পাঁচ হাজার ১০০ কোটি থেকে পাঁচ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে ঘাটতি থাকছে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এরই মধ্যে ১০ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। এরপরও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রাপ্য ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৯১২ কোটি টাকা।

যদিও গত অর্থবছরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ২৯ হাজার ৫১০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ভর্তুকি এরই মধ্যে প্রদান করেছে। তবে এখনও প্রাপ্য ভর্তুকির মধ্যে গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আংশিক বকেয়া রয়েছে, যার পরিমাণ ১৪ হাজার ৯ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রাপ্য ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছর ভর্তুকি বাবদ অর্থ মন্ত্রণালয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এর মধ্যে সাত হাজার ৭০০ কোটি টাকা নগদ ও ১০ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা বন্ড আকারে প্রদান করেছে। অর্থাৎ মোট ১৮ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকা বন্ড আকারে প্রদান করা হতে পারে। ভর্তুকির অবশিষ্ট ১১ হাজার ৭০১ কোটি টাকা দ্রুত ছাড় করতে চিঠিতে বলা হয়েছে।