নিজস্ব প্রতিবেদক: পিপলস লিজিংকে অবসায়ন বা বন্ধ করে দিতে চান না আমানতকারীরা। বরং আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিকে পুনর্গঠন করে টিকিয়ে রাখার দাবি করেছেন তারা। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছেন এর আমানতকারীরা।
সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসকে অবসায়নের সিদ্ধান্ত দেন উচ্চ আদালত। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক আবেদনে এমন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। অবসান প্রক্রিয়া শেষ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদের এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিতে রাখা অর্থ ফেরত পেতে এখন বিভিন্ন দফতরে ঘুরছেন আমানতকারীরা। এজন্য গঠন করেছেন ‘পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিতে আমানতকারীদের কাউন্সিল’ শীর্ষক সংগঠন। গতকাল সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনটি দাবি করা হয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑপিপলস লিজিংকে বন্ধ না করে পুনর্গঠন, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যক্তি আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা ও অবিলম্বে পিপলস লিজিংয়ের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে আমানতকারীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে কাউন্সিলের প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক বলেন, আমরা মনে করি বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। সরকার যেভাবে ফারমার্স ব্যাংককে অবসায়ন না করে পদ্মা ব্যাংক নামে পুনর্গঠন করেছে। তেমনি পিপলস লিজিংকে অবসায়ন না করে পুনর্গঠন করে নতুন নামে চালু করলে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সব সঞ্চয় লুট করে পিপলস লিজিংয়ের পরিচালকসহ অন্যরা আরাম-আয়েশি জীবনযাপন করছে, বিদেশে গিয়ে সেকেন্ড হোম বানাচ্ছে। তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা, তাদের সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করার দাবিও করেন আমানতকারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে আমানতকারী সামিয়া বিনতে মাহবুব বলেন, আমরা আমানত রাখি বলেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারে। ঋণখেলাপি হওয়ার পরও তাদের সুবিধার জন্য নীতিমালা করা হয়। কিন্তু আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। আমানতের যদি নিরাপত্তা না দেওয়া হয়, তাহলে আমানতকারীরা কেন অর্থ জমা রাখবেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করছেন। আমরা প্রত্যাশা করি আর্থিক খাতের দুর্নীতি বন্ধেও তিনি পদক্ষেপ নেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, প্রায় ছয় হাজার আমানতকারী সরল বিশ্বাসে সঞ্চিত ও কষ্টার্জিত অর্থ আমানত হিসাবে পিপলস লিজিংয়ে জমা রাখা হয়। কিন্তু বর্তমানে পিপলস লিজিংয়ের ক্ষুদ্র আমানতকারীরা কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, পিপলস লিজিংয়ের ওপর সঠিক নজরদারি করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। এর ফরে একটি অসাধু চক্র, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। চক্রান্তকারীরা বিভিন্ন কৌশলে, নামে-বেনামে আমানতকারীদের অর্থ বাগিয়ে নিয়েছে। এখানেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। পরিকল্পনা মাফিক তারা প্রতিষ্ঠানটিকে অবসায়নের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
পিপলস লিজিংয়ের আমনতকারীদের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যেতে পারেÑএমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, আমরা ভীত যে, এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে চক্রটি সব দায়-দেনা থেকে মুক্তি পাবে এবং বিদেশে পাচার হবে শত কোটি টাকা। এটি একটি দুর্নীতির মডেল তৈরি হবে, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান সহজেই অনুসরণ করতে চাইবে এবং দেশের অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।
ছয় হাজার আমানতকারীর আমানত ফেরতের ব্যবস্থা না করে ব্যাংলাদেশ ব্যাংক একতরফাভাবে পিপলস লিজিংকে গত জুলাই মাসে অবসায়ন করার প্রক্রিয়া শুরু করে। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পূর্ণ দায়ভার হচ্ছে দ্রুত ব্যক্তি আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া। কিন্তু বাস্তবে প্রায় পাঁচ মাস চলছে এখনও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যক্তি আমানকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া শুরু করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলের আহ্বায়ক মো. আনোয়ারুল হক, প্রশান্ত কুমার দাস, রানা ঘোষ, কামার আহমেদ, সামিয়া বিনতে মাহবুব, আবু নাসের বখতিয়ার, ড. নাশিদ কামাল প্রমুখ।
আমানতকারীদের সংবাদ সম্মেলন
পিপলস লিজিং বন্ধ না করে পুনর্গঠনের দাবি

মন্তব্য