নিজস্ব প্রতিবেদক : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাল্টিমোড সার্ভিল্যান্স সিস্টেম (রাডার) স্থাপন প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) পরিবর্তে সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় টাঙ্গাইল, পঞ্চগড়, বাগেরহাট, নীলফামারি ও লালমনিরহাটে ২৫৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে চারটি প্রকল্পে সম্মতি দেওয়া। এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনে সরবরাহ করবে সরকার। এ চারটি বিদ্যুৎ প্রকল্পে ২০ বছরে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা।
বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে কমিটির সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা কমিটি একইসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন কর্তৃক ২টি হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম (এইচডি) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। আর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাল্টিমোড সার্ভিল্যান্স সিস্টেম (রাডার) স্থাপন প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) পরিবর্তে সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, গতকালের সভায় সৌদি আরব থেকে ২৫ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানি, কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সড়কে গড়াই নদীর ওপর ৫০৫ দশমিক ৫৫ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় বাস্তবায়িত রিহ্যাবিলিটেশন অব ডিসট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক: সিভিল ওয়ার্ক প্যাকেজের কন্ট্রাক্ট ভেরিয়েশনের দুটি প্রস্তাব দুটি আইসিবি-০২.১ এবং আইসিবি ০২.২ অনুমোদন করেছে।
জানা গেছে, চারটি বিদ্যুৎ প্রকল্পে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০ বছর মেয়াদি চুক্তি করবে সরকার। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর নির্ধারিত দামে সেই বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। এর মধ্যে ৫০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র হবে টাঙ্গাইলে। এটি বাস্তবায়ন করবে কনসোর্টিয়াম অব হানওয়া ৬৩ সিটি কোম্পানি লিমিটেড, বিজে পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এবং সোলার সিটি বাংলাদেশ লিমিটেড। এ বিদ্যুৎ প্রতি কিলোওয়াট ১৩ মার্কিন সেন্ট দরে কিনবে সরকার। যা বাংলাদেশি টাকায় ১০ টাকা ৪০ পয়সা করে পড়বে। ২০ বছরে সরকারের আনুমানিক মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা।
পঞ্চগড়ে অন্য একটি কেন্দ্রে উৎপাদন হবে আট মেগাওয়াট। এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশের জেভি অব প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেড ও প্যারাসোল এনার্জি লিমিটেড এবং হংকংয়ের একটি প্রতিষ্ঠান। বিদ্যুৎ ক্রয়ে ২০ বছরে সরকারের মোট আনুমানিক ২৬৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বাগেরহাটের ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্র তৈরি করবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এনারগন টেকনোলজিজ এফজেডই এবং চায়না সানারজি কোম্পানি লিমিটেড। প্রতি কিলোওয়াট ১৩ দশমিক ৮ সেন্টে কিনবে সরকার। যা বাংলাদেশের অর্থে ১১ টাকা ৪ পয়সা পড়বে। ২০ বছরে আনুমানিক ৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
নীলফামারি ও লালমনিরহাটে অবস্থিত অপর বিদ–্যৎ কেন্দ্রটিও ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন। এটি বাস্তবায়ন করবে কনসোর্টিয়াম অব ঝেজিয়াং ডান্যান নিউ এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড, চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন, সোলার টেক পাওয়ার লিমিটেড, এমিটি সোলার লিমিটেড। প্রতি কিলোওয়াট বিদ–্যৎ ১৪ মার্কিন সেন্ট বা ১১ টাকা ২০ পয়সা করে ক্রয় করবে সরকার। ২০ বছরে সরকারের মোট ব্যয় হবে ৩ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা।
পিপিপিতে মংলায় তিন তারকা হোটেল: মংলায় অবস্থিত পর্যটন কর্পোরেশনের মালিকানাধীন ‘হোটেল পশুর’-এ তিন তারকা একটি হোটেল এবং অন্য সুবিধাদি স্থাপনের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে এই হোটেলে ৭টি নন এসি টুইন বেড এবং ৯টি এসি টুইন বেড রয়েছে। হোটেলটি মংলা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত। সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এ বন্দরটি ১৯৫০ সালে চালু হলেও এখানে কোনো তিন বা পাঁচতারকা হোটেল নেই। পর্যটন কর্পোরেশনের এ হোটেলটিই ভালো হোটেল হিসেবে পরিচিত। বাগেরহাটের রামপালের প্রস্তাবিত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আরও বাড়বে বলেই পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।