নিজস্ব প্রতিবেদক:হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের (টার্মিনাল-৩) পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে করা হবে। এ লক্ষ্যে ‘অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেনেন্স অব থার্ড টার্মিনাল অ্যাট হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভা শেষে বিষয়টি জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
তিনি বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ এর ‘অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেনেন্স অব থার্ড টার্মিনাল অ্যাট হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’ প্রকল্পটি পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
পিপিপিতে কারা এ প্রকল্পের কাজ পাচ্ছেন সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্নে করা হলে তিনি বলেন, কোম্পানি এখনও ঠিক হয়নি। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের অক্টোবরে উদ্বোধন হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল (টার্মিনাল-৩)। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে হচ্ছে এর নির্মাণ। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৫১ শতাংশের বেশি।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর। সে সময় ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে আরও সাত হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ালে প্রকল্পের আকার দাঁড়ায় প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।
প্রকল্প ব্যয়ের অধিকাংশ অর্থই আসছে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকার কাছ থেকে। সংস্থাটি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি দুই লাখ ৪৫ হাজার টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ২৫৮ কোটি তিন লাখ ৮৮ হাজার টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমানে দুটি টার্মিনাল আছে। দুটি টার্মিনালের আয়তন এক লাখ বর্গমিটার। তৃতীয় যে টার্মিনালটি হচ্ছে সেটির আকার বর্তমান দুটির দ্বিগুণের বেশি।
দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের টার্মিনালটির নির্মাণকাজ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়। প্রকল্প অনুমোদনের সিদ্ধান্ত অনুসারে, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে। ঢাকা কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিটা এবং কোরিয়ার স্যামসাং এ তিন প্রতিষ্ঠান মিলে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করছে।
এ টার্মিনালে মোট ৩৭ অ্যাপ্রোন পার্কিং থাকবে। ফলে একসঙ্গে ৩৭ উড়োজাহাজ পার্ক করা যাবে। শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমানে ট্যাক্সিওয়ে আছে চারটি। নতুন করে আরও দুটি হাই স্পিড ট্যাক্সিওয়ে যোগ হচ্ছে। রানওয়েতে উড়োজাহাজকে যেন বেশি সময় থাকতে না হয় সেজন্য তৈরি করা হচ্ছে নতুন দুটি ট্যাক্সিওয়ে। এছাড়া পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য দুটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আরও থাকবে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তিনতলা ভবন।
বেবিচকের তথ্যানুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনালে থাকবে ২৬ বোর্ডিং ব্রিজ। প্রথম ধাপে চালু করা হবে ১২টি। থাকবে উড়োজাহাজ রাখার জন্য ৩৬টি পার্কিং বে। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার থাকবে। এছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ থাকবে ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার।
আগমনের ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেকইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট ও ১৯টি চেক ইন অ্যারাইভাল কাউন্টার থাকবে। এর বাইরে টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে এক হাজার ৩৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
এদিকে, বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের একটি লুপ নেমে গেছে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে। টার্মিনালের প্রথম গেট এলাকায় আবার খোঁড়াখুঁড়ির কাজও চলছে। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে টানেল। এ টানেল গিয়ে মিলবে বিমানবন্দরের অদূরে অবস্থিত মেট্রোরেলের স্টেশনে। সবগুলোর নির্মাণ শেষ হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর মেট্রোরেলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে বিমানবন্দর। ফলে বিদেশ থেকে যেসব যাত্রী আসবেন তারা খুব সহজেই বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারবেন। আবার যারা বিদেশ যাবেন তারাও রাজধানীর যানজট এড়িয়ে খুব সহজে চলে যেতে পারবেন বিমানবন্দরে।