শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে টাঙ্গন নদীতে নির্মিত সাগুনী রাবার ড্যামের উজানে জমানো নদীর পানি শ্যালো মেশিন দিয়ে চলতি বছর ?খরার সময় সেচকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। খরার কারণে অনেক টিউবওয়েল ও নলকূপে পানি উঠছে না। আমন আবাদের সেচ নিয়ে খরার সময় চরম বিপদে পড়ছেন? এ অঞ্চলের কৃষকরা। চারদিকে জীবনযাত্রায় যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, ঠিক সেই সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে টাঙ্গন নদীর সাগুনী এবং রানীরঘাট রাবার ড্যামের উজানে নদী এখন পানিতে ভরপুর।
নদীর এ অংশে লো লিফট পাম্প এবং শ্যালো মেশিন বসিয়ে সেই পানি দিয়ে চলছে সেচ কার্যক্রম। চলতি মৌসুমে প্রায় দুই হাজার হেক্টর বোরো মৌসুম ও খরার সময় আমন ধানক্ষেতে সম্পূরক সেচ দেয়া হচ্ছে এ নদীর পানি দিয়েই। এ ছাড়া নদীতে প্রচুর পানি থাকায় নদীর দুইধারে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার ওপরে ওঠে এসেছে। আশপাশের গ্রামগুলোতে টিউবওয়েল বা নলকূপে পানির কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর দেশি প্রজাতির মিঠা পানির মাছ। পরিবর্তন এসেছে জীববৈচিত্র্যেও। প্রকৃতিপ্রেমিকরা ভিড় জমাচ্ছেন সেই রাবার ড্যাম দেখার জন্য।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, নদীর পানি কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেই ভাবনা থেকে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৫ সালে টাঙ্গন নদীর পীরগঞ্জ উপজেলার সাগুনী এবং রানীরঘাট এলাকায় দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। আগে এ সময় নদী শুকিয়ে গেলেও বর্তমানে রাবার ড্যামের রাবার ফুলিয়ে পানি আটকে রাখার ফলে ড্যামের উজানে নদী ফিরে পেয়েছে ভরা যৌবন। রাবার ড্যামের উজানে নদীতে ঠাকুরগাঁও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সাল থেকে লো লিফট পাম্প স্থাপন করে জমানো পানি কৃষিকাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়। সাধারণ কৃষকও শ্যালো মেশিন বসিয়ে জমানো পানি দিয়ে নিজ জমিতে সেচের ব্যবস্থা করে।
ঠাকুরগাঁও বিএমডিএও নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ভূ-উপরস্থ পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ টাঙ্গন নদীর সাগুনী রাবার ড্যাম উজানে পর্যায়ক্রমে ২০টি এবং রানীরঘাট রাবার ড্যাম এলাকায় ৩৩টি লো লিফট পাম্প চালু করেছে। নদীতে মজুত করা পানি দিয়েই সাগুনী রাবার ড্যামের আওতায় সাগুনী, বাঁশগাড়া, চাপোড়, মছলন্দপুর, মশালডাঙ্গী, মালঞ্চা, নাকাটি, ফুটকিবাড়ী, ভামদা, সুলতানপুর, সেনিহারি এবং রানীরঘাট রাবার ড্যামের আওতায় বৈরচুনা, আজলাবাদ, শিরাইলসহ ১০ থেকে ১২টি গ্রামের জমিতে চলছে চাষাবাদ।
সাগুনী এলাকার সাইদুর, বাঁশগাড়ার কার্তিকসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, আগে নদীতে পানি থাকত না। রাবার ড্যাম হওয়ার পর নদীতে পানি থাকছে।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লায়লা আরজুমান আরা জানান, সাগুনী রাবার ড্যামের উজানে প্রায় চার কিমি এবং রানীরঘাট রাবার ড্যামের উজানে প্রায় পাঁচ কিমি এলাকায় নদীর দুই ধারের বিশাল পতিত জমি সেচের আওতায় এসেছে। এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানিতে আয়রন থাকার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু নদীর পানিতে কোনো আয়রন থাকে না, এতে কৃষি কাজে সার কম লাগবে এবং ফলন বাড়বে। সেচের খরচও কম।