সাইফুল ইসলাম : যেকোনো দেশের পুঁজিবাজার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় পুঁজিবাজারই অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। কেবল নিয়ন্ত্রণই নয়, পুঁজিবাজার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধও করে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। এখানে পুঁজিবাজার এখনও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেনি। আর এ নিয়ে আলোকপাত করতে যাচ্ছি।
সর্বপ্রথমে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে- আমাদের পুঁজিবাজারের চালিকাশক্তি কে? যদি বলা হয়, প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মাথায় রাখতে হবে, পুঁজিবাজারের পুঁজির উৎস কোথায়? ধরা যাক, পুঁজির প্রধান উৎস ব্যাংক, আর সাধারণ জনগণের গচ্ছিত পুঁজি। পুঁজিবাজার হচ্ছে মানি মার্কেটের একটি অন্যতম অংশ। মানি মার্কেটের সাপোর্টটা কোথা থেকে আসে? ধরা যাক, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তাহলে এখানে স্পষ্টীকরণ হলো, পুঁজিবাজার যদি প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করে আর মানি মার্কেট বা ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই দুই প্রতিষ্ঠানের প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ সরকার। তাই এখানে সরকারের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত, এই দুই প্রতিষ্ঠানে প্রধান হিসেবে এমন কাউকে দায়িত্ব দেয়া, যারা পুঁজিবাজারবান্ধব হবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের যিনি গভর্নর হবেন তিনি যেন সবসময় পুঁজিবাজারকে মানি মার্কেটের প্রধান অংশ হিসেবে দেখেন। যেকোনো বিষয় আলোচনার প্রয়োজন হলে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান সুষ্ঠু আলোচনার মাধ্যমে যাতে সমাধান করেন, কোনো প্রকার পাবলিক সার্কুলার না হয়। সে দিকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন সিইও। প্রত্যেক সিইও হতে হবে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও পুঁজিবাজারবান্ধব। কারণ সিইও-ই প্রতিটি হাউসের বিনিয়োগ পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ অবশ্যই সময়োপযোগী হতে হবে। সময়সীমা ( টাইম ফ্রেম) তৈরি করে বিনিয়োগ করতে হবে। ইনস্টিটিউটকে অবশ্যই মেয়াদি সম্পন্ন ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে, মনে রাখতে হবে ইনভেস্টমেন্ট-রিস্ক-রিটার্ন।
পুঁজিবাজারকে নিজস্ব গতিতে উঠতে-নামতে দিতে হবে। কখনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করে উঠতে-নামতে দেয়া যাবে না। পাশাপাশি মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের বিষয় বিশেষ নজরদারিতে রাখতে হবে।
শেয়ারবাজারে মানুষ বিনিয়োগ করতে আসে লাভের আশায়, ক্ষতির জন্য নয়। অনেকে মনে করেন, এখানে ১ টাকাকে ৫০ টাকা করা যায়। তাই বাজারে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়তে থাকলে ডিএসই দর বৃদ্ধির কারণ (কোয়ারি) জানতে চায়। ফলে বাজারে এই শেয়ারের লেনদেনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে ডিএসই এবং বিএসইসিকে সুদৃষ্টি দিতে হবে। ব্রোকারেজ হাউসের ঋণ বাজারের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোন স্টকে ঋণ দেয়া যাবে বা কোন স্টকে ঋণ দেয়া যাবে না; সে বিষয়ে হাউসগুলো সিদ্ধান্ত নিলে বাজারে ইতিবাচক ফল আসবে বলে মনে হয়। তাহলে ঋণ নিয়ে কখনও আর কথা হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোজার-এর বিষয়টা স্পষ্টীকরণ করতে হবে। বন্ড এক্সপোজারের আওতাভুক্ত নাকি আওতামুক্ত হবে।
বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি দেশীয় স্বনামধন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বাজারে আনার উদ্যোগ নেয়া এবং পাশাপাশি কাজ করার ব্যবস্থা করতে হবে। পদ্মা সেতুর পাশাপাশি সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠান বাজারে আনার উদ্যোগ নেয়ার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।
সর্বশেষ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারিভাবে বিভিন্ন খাতকে বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে থাকেন। কিন্তু একবার একটি বিশেষ কমিটি করে এক লাখ কোটি টাকা শেয়ার মার্কেটকে বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে দেখুন। তাতে স্টক মার্কেটের যে ডেইলি টার্নওভার বা ভলিউম হবে এবং তার মাধ্যমে প্রতি কার্যদিবসে যে পরিমাণ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আসবে। সরকার টাকা এআইটির মাধ্যমে ফিরে পাবে। পুঁজিবাজার হবে বিশেষ শক্তিশালী এবং অর্থনীতির সমন্বিত বাজার।
সাবেক সিইও
প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেড