Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:32 pm

পুঁজিবাজারের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাড়ছে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর ও বাজার মূলধন। একই সঙ্গে প্রতিনিয়ত বাড়ছে লেনদেনও। এর জের ধরে গতকাল পুঁজিবাজারের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল দুই হাজার ৯৩৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর গতকালের চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল। ওইদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল তিন হাজার ২৪৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

গতকাল লেনদেন শেষে ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ্ সূচক ১২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট ও ডিএসই-৩০ সূচক ছয় দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪৫২ দশমিক ১১ পয়েন্টে ও দুই হাজার ৩৯২ দশমিক ৬২ পয়েন্টে। এই দুই সূচক অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চে অবস্থান করছে।

২০১০ সালে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ধসে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। অস্বাভাবিক সূচক পতনের পাশাপাশি একযোগে কমতে থাকে তালিকাভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটদর। এরপর ১০ বছর কেটে গেলেও পুঁজিবাজারে তেমন স্থিতিশীলতা দেখা যায়নি। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে পুঁজিবাজার। তবে সম্প্রতি এ ধারায় পরিবর্তন হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। এটা স্থায়ী হবে, এমনটি ভাবছেন বাজারসংশ্লিষ্ট থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারীসহ সবাই।

এদিকে কভিড-১৯ ভীতি কাটিয়ে আবার পুঁজিবাজারে ফিরতে শুরু করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যদিও বেশিরভাগ লেনদেন হচ্ছে অনলাইনে। মূলত নতুন কমিশন ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শামীম হাসান নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করে মনে হচ্ছে, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে। বাজারের এমন পরিস্থিতি থাকলে সামনে আরও অনেক বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আসবেন। তবে এজন্য স্থিতিশীলতা আগে দরকার।

তিনি বলেন, আগে বহুবার দেখেছি বাজার ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে পারেনি। আশা করছি, এবার তেমন হবে না।

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজার এখন ভালো অবস্থায় রয়েছে। আমার জানামতে, বাজারের প্রতি নজর রেখেছে বিএসইসি কর্তৃপক্ষ। লক্ষ রাখতে হবে, এখান থেকে যেন কেউ সুবিধা নিতে না পারে। সব ঠিক থাকলে পুঁজিবাজার আরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে হাউস কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অসংখ্য বিও অ্যাকটিভ ছিল না। বর্তমানে সেসব বিও সচল হচ্ছে। পুরুষের পাশাপাশি সচল হচ্ছে নারীদের বিও। একে বাজারের শুভ লক্ষণ বলে মনে করছেন ব্রোকারেজ হাউসের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। জানতে চাইলে একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিনিয়োগকারীরা ফিরে আসছেন, এটা পুঁজিবাজারের জন্য শুভ লক্ষণ।

২০১০ সালে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি যখন ভালো ছিল, তখন ডিএসইর দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার কোটি টাকা। সে সময় ঢাকার প্রতিটি হাউসে গড়ে ৩০ কোটি টাকা লেনদেন হতো। পরবর্তীকালে বাজার মন্দা যাওয়ায় তা অনেক নিচে নেমে যায়। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে ব্রোকারেজ ব্যবসায়। এখন পুঁজিবাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় ব্যবসাও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।