পুঁজিবাজারের টাকায় শিল্পায়ন হলে অর্থনীতি শক্তিশালী হবে

দেশের পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ারের খুবই অভাব। প্রথম শ্রেণির ২০টি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মধ্যে মাত্র পাঁচটি বাজারে তালিকাভুক্ত আছে। ব্যাংকগুলোর কাজ কিন্তু সমগ্র শিল্পায়নে অর্থ সরবরাহ করা নয়, তাদের কাজ হচ্ছে সম্পূর্ণ মানি মার্কেটের সরবরাহ ঠিক রাখা। দেশের প্রধান শিল্প-কারখানাগুলো যদি পুঁজিবাজারের টাকায় করা হতো, তাহলে দেশের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক শক্তিশালী হতো। তাহলে হঠাৎ এভাবে আর্থিক সংকটে পড়তে হতো না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন এবিবি’র সাবেক সভাপতি মো. নুরুল আমিন এবং আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব।
মো. নুরুল আমিন বলেন, পুঁজিবাজার ও মুদ্রাবাজার আলাদা দুটি বাজার এবং এরা মোটামুটি স্বাধীনভাবে কাজ করে। তাছাড়া সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেই অর্থের প্রয়োজন। পুঁজিবাজারের জন্য অর্থের প্রাথমিক উৎস হচ্ছে ব্যাংক। আর মানুষ পুঁজি সংগ্রহ করে পুঁজিবাজার থেকে যেটি এ দেশে তুলনামূলক কম হয়। ফলে মুদ্রাবাজারের প্রয়োজনীয়তা বেশি এখানে। যদি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন বা ইকুইটি সংগ্রহ করা যেত, তাহলে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীল হতো না দেশের পুঁজিবাজার। যদিও আরও অনেক কারণ আছেÑযেমন বাজারের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট, ভালো শেয়ার ও সুশাসনের অভাব প্রভৃতি। সম্প্রতি পুঁজিবাজারকে উদ্দেশ্য না করলেও মুদ্রাবাজারকে উদ্দেশ্য করে তিনটি নিয়ম করা হয়েছে। প্রথমত, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সুবিধার জন্য সরকারি তহবিলের ৫০ শতাংশ অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। আগের নিয়ম অনুসারে সরকারি তহবিলের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যেত। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ব্যাংকে সব ব্যাংকের ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ টাকা রিজার্ভে রাখতে হয়। এটি হচ্ছে স্ট্যাটিউটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) ও ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর)। যা এক শতাংশ কমে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোর প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত আছে সিআরআর হিসেবে। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুসারে আগের থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা কম রাখতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। মানে এ টাকাগুলো বিনিয়োগযোগ্য অর্থ হিসেবে ব্যাংকের হাতে চলে এসেছে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশ ব্যাংকে বন্ড রেখে ব্যাংকগুলো ঋণ নিতে পারে এবং সে রেটটি ছিল ছয় দশমিক ৭৫ শতাংশ। সেখানেও দশমিক ৭৫ শতাংশ কমিয়ে তা ছয় শতাংশ করা হয়েছে। এতে ঋণের খরচ ব্যাংকের জন্য কমে এসেছে; ফলে সেখান থেকেও ব্যাংক প্রয়োজনে কিছু টাকা সংগ্রহ করতে পারবে। আর এ তিনটি বিষয়ের পরিবর্তনের কারণে ব্যাংক খাতে বেশ কিছু তারল্য আসার সম্ভাবনা আছে। এটি যে সরাসরি পুঁজিবাজারের জন্য করা হয়েছে তা নয়; কিন্তু এর একটি প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়বে।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, সাধারণত সারা পৃথিবীতে শিল্প-কারখানার প্রবৃদ্ধি হয় পুঁজিবাজার থেকে ইকুইটি নিয়ে এবং শুধু ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ব্যাংকগুলো জোগান দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে এ প্রবণতাটি নেই। যেমন, মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী জনতা ব্যাংক নিয়ম অনুসারে তার মোট মূলধনের ২৫ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিতে পারে; কিন্তু তার পাঁচগুণ বেশি একজন একক গ্রাহককে দিয়েছে। আমার মনে হয়, এ বিষয়গুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারিতে রাখা উচিত। অন্যদিকে দেশে এখন প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। আর এ প্রকল্পগুলো যদি পুঁজিবাজার থেকে ইকুইটি নিয়ে করা যেত, তাহলে দুটি বিষয় ঘটত না। যেমন ইনস্টলমেন্টও দিতে হতো না এবং ইন্টারেস্টও দিতে হতো না। ফলে পুঁজিবাজার শক্তিশালী হতো এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ত। যেটি ভারতে হয়েছে। দেশের বাজারে ভালো শেয়ারের খুবই অভাব। লক্ষ্য করলে দেখবেন, দেশের প্রথম শ্রেণির ২০টি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মধ্যে মাত্র পাঁচটি বাজারে তালিকাভুক্ত আছে। কাজেই শুধু বাংলাদেশ ব্যাংককে দোষ দিলেই হবে না। এখানে পলিসিটাই ছিল ঋণ দেওয়ার। ব্যাংকের কাজ কিন্তু সমগ্র শিল্পায়নে অর্থ দেওয়া নয়, তাদের কাজ হচ্ছে সম্পূর্ণ মানি মার্কেটের সরবরাহ ঠিক রাখা। দেশের প্রধান শিল্প-কারখানাগুলো যদি পুঁজিবাজারের টাকায় হতো, তাহলে কিন্তু দেশের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক শক্তিশালী হতো। তখন হঠাৎ এভাবে আর্থিক সংকটে পড়তে হতো না।

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০