মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ : মন্দা বাজারে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দরে পতন হলেও এখনও আশা জাগিয়ে রেখেছে ব্যাংক খাতের শেয়ার। এখনও বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে বাজার মূলধনের ২০ দশমিক ৫১ শতাংশ রয়েছে এ খাতের দখলে। একইভাবে মোট লেনদেনের প্রায় ২৪ শতাংশ অবদান রয়েছে এ খাতে।
ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাজার মূলধন এবং লেনদেনের পাশাপাশি শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও রয়েছে বিনিয়োগের অনুকূলে। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের পিই রেশিও রয়েছে ৯ দশমিক চার পয়েন্টে। আর বাজার মূলধনের ব্যাংকের পরের আর্থিক খাতের শেয়ার। এ সেক্টরের অবদান ১৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। পরের অবস্থানে রয়েছে টেক্সটাইল খাত। এ খাতের অবদান ১৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পলিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘বিনিয়োগকারী সব সময় ভালো শেয়ারের সঙ্গে থাকতে চান। সার্বিক বিবেচনায় এখনও অধিকাংশ ব্যাংক শেয়ারে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। হয়ত সে কারণেই ব্যাংক শেয়ারের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।’
একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা স্টকএক্সচেঞ্জের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতোমধ্যে বাজারে কিছু কিছু শেয়ার অতি মূল্যায়িত হয়ে উঠেছে। কিন্তু একটি ব্যাংক শেয়ার এখনও অতি মূল্যায়িত হয়নি। তাছাড়া এ খাতের বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর এখনও অনেক কম রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ সময় নিয়ে বিনিয়োগ করলে এখান থেকে ভালো রিটার্নের প্রত্যাশা করতেই পারেন।’
একই এ প্রসঙ্গে এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি পূর্বে বলেছি, ব্যাংকিং খাতের কিছু সমস্যা ছিল। তবে এখন সে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। আশা করছি, বিনিয়োগকারীদের এখন এই শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। তবে এই ক্ষেত্রে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। তারা যদি এসব শেয়ারের দিকে নজর দেন, তবেই খাতটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’
এদিকে ব্যাংকের পিই রেশিও এখনও ১০-এর নিচে অবস্থান করছে। সশ্লিষ্টদের মতে, যে কোনো খাত বা কোম্পানির ক্ষেতে এই রেশিও বিনিয়োগের উপযোগী। কোনো প্রতিষ্ঠানের পিই ২০-এর উপরে চলে গেলে ধীরে ধীরে ওই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর ৪০ এর বেশি পিই হলে ওই প্রতিষ্ঠানকে খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সে কারণে এই ধরনের কোম্পানির মার্জিন ঋণ সুবিধা বন্ধ থাকে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের পর তালিকাভুক্ত সবগুলো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর তলানিতে চলে আসে। পরবর্তীতে হলমার্ক, বেসিক ব্যাংকসহ এই খাতে নানা অনিয়মের কারণে এই খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ব্যাংকিং খাত ছেড়ে বিনিয়োগকারীরা অন্যান্য খাতের দিকে ঝুঁকে পড়েন। যে কারণে লেনদেন এবং বাজার মূলধনে খাতটির অবদান কমে যায়। দীর্ঘদিন পর সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছে খাতটি।
অন্যান্যের মধ্যে বর্তমানে লেদদেনে শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আইটি খাত। লেনদেনে এই খাতের অবদান রয়েছে ১৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিমেন্ট খাতের অবদান ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ। এর পরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে টেক্সটাইল, জ্বালানি ও শক্তি এবং সিরামিক খাত।