পুঁজিবাজারের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ভালো কোম্পানি আনা দরকার

বিশ্বের কোনো দেশের পুঁজিবাজারে ৩০ শতাংশের বেশি কোম্পানি ভালো পারফরম্যান্স করে না। আর আমাদের বাজারে মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ ইকুইটি অন্তর্ভুক্ত। এখানে ১২টির বেশি ভালো কোম্পানি নেই। এদের মধ্যে আবার ছয়টি বহুজাতিক এবং ছয়টি দেশীয় কোম্পানি। ২০০৮ সালে যখন গ্রামীণফোন বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন বিশ্বজুড়ে পত্রিকাগুলোতে সংবাদ হয়েছে। এতে পুঁজিবাজারও একটা সুনাম অর্জন করেছে। আসলে বাজারের একটা ব্র্যান্ডিংয়েরও ব্যাপার রয়েছে। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ভালো মানের কোম্পানিগুলো বাজারে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও আইনজীবী হাসান মাহমুদ বিপ্লব এবং পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ আহছান উল্লাহ।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইসিবি। বর্তমানে বাজারের এ অবস্থায় যদি আইসিবিকে আট হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয় এবং ওই অর্থ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ২০ থেকে ২৫টি ইকুইটিতে বিনিয়োগ করলে বাজার স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরে আসতে পারে। ওয়ারেন্ট বাফেটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার পোর্টফোলিওতে ২০ থেকে ২২টি শেয়ার থাকে। বিশ্বের কোনো দেশের পুঁজিবাজারে ৩০ শতাংশ বেশি কোম্পানির শেয়ার ভালো পারফরমেন্স করে না। আর আমাদের বাজারে মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ ইকুইটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এখানে ১২টির বেশি ভালো কোম্পানি নেই। এদের মধ্যে আবার ছয়টি বহুজাতিক কোম্পানি এবং ছয়টি দেশীয়ও কোম্পানি। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ভালো মানের কোম্পানিগুলো বাজারে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। আবার বাজারে অনেকে না বুঝে বিনিয়োগ করে এবং ৯৯ শতাংশ বিনিয়োগকারীর বাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। তাই একজন বিনিয়োগকারীকে অন্তত ছয় মাস বাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে বিনিয়োগ করা উচিত। এতে বিনিয়োগকারীদের লোকসান কম হবে। বাজার ভালো হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। দেশে অনেক ভালো মানের বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে। যদি সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা যায়, বাজারের গতিশীলতা বাড়বে। ২০০৮ সালে যখন গ্রামীণফোন বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন বিশ্বজুড়ে পত্রিকাগুলোতে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এতে পুঁজিবাজার একটা সুনাম অর্জন করেছে। আসলে বাজারের একটা ব্র্যান্ডিংয়ের ও ব্যাপার রয়েছে।
মুহাম্মদ আহছান উল্লাহ বলেন, দেশে জিডিপির তুলনায় পুঁজিবাজারের বাজার মূলধনের অনেক ব্যবধান রয়েছে। জিডিপির তুলনা করলে বাজারের অবদান আরও হওয়ার কথা ছিল। ২০১০ সালে ধসের পর থেকে বাজার নিম্নগতিতে ছিল। শুধু ২০১৭ সালে বাজার কিছুটা গতিশীল ছিল। বাকি আট থেকে ৯ বছরে বাজার বেশিরভাগই খারাপ অবস্থানে ছিল। সত্যিকার অর্থে, এখন বিনিয়োগকারীর আস্থা নেই। কারণ বাজারের বিভিন্ন অনিয়মসহ কোম্পানিগুলো আশানুরূপ লভ্যাংশ দিচ্ছে না। বাজারে অন্তর্ভুক্ত ৩০০ থেকে ৪০০ কোম্পানির মধ্যে ৯৯ শতাংশই আশানুরূপ লভ্যাংশ দিচ্ছে না। একদিকে বিনিয়োগকারীর আস্থা নেই, তাই বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বাজার মূলধনও কমে যাচ্ছে। এখন মানি মার্কেটে তারল্য সংকট বিরাজমান। এর একটা প্রভাব বাজারে পড়ছে। তাই বাজার স্থিতিশীল করতে বড় বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের উৎসাহিত করার পাশাপাশি পলিসি সাপোর্ট দিতে হবে। যারা এক বছরের বেশি শেয়ার ধরে রাখবে, তাদের ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ কর সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এতে বড় বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আসবে। এতে বাজার ইতিবাচক অবস্থানে ফিরে আসবে। যখন বাজার ইতিবাচক অবস্থানে থাকবে তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০