পুঁজিবাজারের লাগাতার উত্থান শঙ্কা বাড়াচ্ছে বিনিয়োগকারীদের

 

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: কিছুদিন যাবৎ দেশের পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। সূচকের পাশাপাশি বাড়ছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। ফলে  আবারও পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন  সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।  এর সঙ্গে বাড়ছে বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা। বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, সবমিলে পুঁজিবাজারে এখন  ইতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। তবে পুঁজিবাজারের এ ধারাবাহিক উত্থানের প্রতিক্রিয়ায় পুনরায় কোনো অঘটন ঘটে কি নাÑতা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে অনেকে এ বাজারে বিনিয়োগ করবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। কারণ ২০১০ সালে এমন বাজারে বিনিয়োগ করে তাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। অন্যদিকে কারও কারও মতে, বাজার এখনও ঝুঁকিপূর্ণ হয়নি। তবে টানা উত্থান বা টানা পতন কোনোটাই পুঁজিবাজারের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। সে কারণে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকা উচিত বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকার বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এ বাজারকে স্বাভাবিক বললেও অধিকাংশ বিনিয়োগকারী এটাকে অস্বাভাবিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে, বাজারে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে কাক্সিক্ষত কারেকশন জরুরি।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, পুঁজিবাজার এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে, আমি সেটা মনে করছি না। নিয়মানুযায়ী, সূচক যদি প্রতিদিন ১ শতাংশের বেশি বাড়ে, তবে সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা যায়। আমাদের বাজারে এখনও তা হচ্ছে না। তবে বর্তমানে ভালো শেয়ারের পাশাপাশি কিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে, এটা মোটেও স্বাভাবিক নয়। এসব কোম্পানিতে  বিনিয়োগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আর ঊর্ধ্বমুখী বাজারে এসব কোম্পানি  সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। তাই বিনিয়োগকারীদের এখনই সতর্ক থাকা দরকার। তবে বাজারে এখনও অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা।

একই বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, পুঁজিবাজার টানা উত্থান বা পতন কোনোটাই ভালো নয়। তবে আমাদের পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা দীর্ঘদিন থেকে নাজুক। সে বিবেচনায় বলতে গেলে বাজারে এখনও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আসেনি। তবে বাজারসংশ্লিষ্ট যারা রয়েছে, তাদের উচিত হবে দুর্বল এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরির লাগাম এখনই টেনে ধরা। কারণ দুর্বলের পাশাপাশি কিছু মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির  শেয়ার ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এসব কোম্পানির শেয়ারে মার্জিন সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া দরকার।

লুৎফর রহমান নামের একজন বিনিয়োগকারী শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করি লাভের আশায়। সে কারণে বাজার ভালো থাকলে বা নিজের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারদর বাড়লে ভালো লাগে। তবে টানা ঊর্ধ্বমুখী বাজার আমার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হয়।

অতীতে এমন বাজারে বিনিয়োগ করে অনেক বিনিয়োগকারী চরম মূল্য দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের মাঝেমধ্যে কাক্সিক্ষত কারেকশন দরকার।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত এক মাসের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ৪২৭ পয়েন্ট। একমাস আগে প্রধান সূচক ছিল চার হাজার ৯০৬ পয়েন্ট। গতকাল যা ওঠে এসেছে পাঁচ হাজার ৩৩৩ পয়েন্টে। আর এ সময়ের মধ্যে মাত্র দুই কার্যদিবসে সামান্য পতন হয়েছে সূচকের। বাকি দিনগুলোতে টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল সূচক। ডিএসইর সূচকচিত্রে দেখা যায়, ১৪ ডিসেম্বর সূচক ছিল চার হাজার ৯০৬ পয়েন্টে। এর পর সাত কার্যদিবসের ব্যবধানে তা চলে আসে পাঁচ হাজার পয়েন্টে।  এর পর টানা আট কার্যদিবস উত্থান থাকার পর এদিন সূচকের কিছুটা নি¤œমুখী অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। পরের তিন কার্যদিবসে সূচক আরও বেড়ে গতকাল পাঁচ হাজার ৩৩৩ পয়েন্ট গিয়ে দাঁড়ায়। এ সময়ের মধ্যে মোট লেনদেন হয়েছে ১৯ কার্যদিবস। সে হিসাবে দৈনিক গড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ২২.৪৬ পয়েন্ট। অন্যদিকে এ সময়ের মধ্যে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। একমাস ডিএসইতে লেনদেন ছিল এক হাজার ৬৪ কোটি টাকা। গতকাল যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭০৪ কোটি টাকায়।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০