Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 12:19 pm

পুঁজিবাজারের সঙ্গে মুদ্রানীতির সম্পর্ক নিবিড়

দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে মুদ্রানীতির খুব বড় ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। মুদ্রানীতিতে অনেক নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ফলে বাজারে এর একটি প্রভাব রয়েছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক শাজাহান মিনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।

শাজাহান মিনা বলেন, আমরা লক্ষ করেছি, পুঁজিবাজারে এক একটি ইস্যুকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে। আমার কাছে এটি স্বাভাবিক মনে হয়। কারণ বিগত দিনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যে কারণে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট যে কোনো কিছু হলেই তারা আতঙ্কিত থাকেন। প্রত্যক্ষভাবে পুঁজিবাজারের সঙ্গে মুদ্রানীতি জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে কিছুটা আছে। পুঁজিবাজার হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগের একটি জায়গা। আর মুদ্রানীতির কাজ আমাদের স্বল্প মেয়াদি যে কর্মকাণ্ডগুলো আছে সেখানে হয়। তবে পরোক্ষভাবে কিছুটা জড়িত। যেমন মুদ্রানীতিতে যদি সুদের হার কমানো বা বাড়ানো হবে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয় সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজার পরোক্ষভাবে সুবিধা পাবে। আমানতের সুদের হার কমানো হয়, সেক্ষেত্রে মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে পুঁজিবাজারে আসার চেষ্টা করবে। অন্যথায় আমানতের সুদের হার বাড়ানো হলে মানুষ ব্যাংকের দিকে আগ্রহী বেশি হবে। কাজেই সরাসরি মুদ্রানীতি পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই। তারপরও বিনিয়োগকারীরা ১৯৯৬, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারের বড় দুর্ঘটনার কারণে সব সময় ভীত থাকে। ফলে বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে রেখে মানুষ বাজারে বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকতে চায়। তিনি বলেন, আইপিও লটারির ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের চেয়ে হয়তো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রাধান্য বেশি দেওয়া হয়। ফলে আমি মনে করি, যেহেতু বর্তমান বাজারে মানুষ সেকেন্ডারি মার্কেটে অপারেট করতে না পেরে প্রাইমারি মার্কেটে অপারেট করছে, সেহেতু সাধারণ  বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিওতে একটু বেশি সুযোগ দেওয়া উচিত। তা ছাড়া বাজারে আইপিও শেয়ারের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কেন বেশি করে আইপিও দিচ্ছে না। যেখানে বহু কোম্পানি আইপিওর জন্য আবেদন করে অপেক্ষা করছে। কাজেই এ বিষয়টি বিবেচনায় আনা দরকার।

মিজানুর রহমান বলেন, আমি স্যারের মতের সঙ্গে একটু ভিন্ন মত পোষণ করছি। মুদ্রানীতির সঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেটের গভীর সংযোগ আছে এবং দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক আছে। মুদ্রানীতির মাধ্যমে সাধারণত সুদের হারকে প্রভাবিত করা হয়। ২০১৩-১৪ সাল পর্যন্ত উচ্চ সুদের হার ছিল। এখন তা ব্যাপকভাবে হাস পেয়েছে। আমি আশা করি মুদ্রানীতি এর আগের চয় মাসে সুদের হার ও মূল্যস্ফীতি যে প্রাক্কলন করেছিল সে ধারা অব্যাহত থাকবে। আর আমার প্রত্যাশা এ লো ইন্টারেস্ট রেজিম আরও কিছুদিন চলবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। আমাদের মার্কেট একটি অসম্পূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট। এখানে ঝুঁকি সামাল দেওয়ার কোনো পদ্ধতি নেই। শুধু ইকুইটি দিয়ে চলে। যেসব বিনিয়োগকারী ঝুঁকি নিয়ে ভাবে যারা ক্যাপিটালকে প্রডাক্ট করতে চায়, তারা এ মার্কেটে আসতে চাইবে না। এ জন্য মার্কেট উন্নয়ন খুবই জরুরি। এখানে বন্ড মার্কেট খুবই জরুরি। যদিও বিগত দু-তিন বছর যাবৎ আমরা শুনছি বিএসইসি এবং সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন আমরা এখনও দেখিনি। আর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ সময় স্থায়ী করতে হয় তাহলে অবশ্যই ঝুঁকি সামালের সুযোগ দিতে হবে।

 

শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম