আতাউর রহমান: দেশের উভয় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি, ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক-সহকারে নিবন্ধিত সব প্রতিষ্ঠানের তথ্য? ও প্রতিবেদন একই প্ল্যাটফর্মে জমা দিতে কাজ শুরু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় স্টক এক্সচেঞ্জগুলোসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং দেশি-বিদেশি পরামর্শকের সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এবং পুঁজিবাজার মার্কেটের উন্নয়নে কমিশনে নিবন্ধিত সব প্রতিষ্ঠান বা সত্তার জন্য একটি একক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই প্ল্যাটফর্মের নাম কমিশন ‘বিএসইসি-আরবিসিএ (ইঝঊঈ-জইঈঅ) রিপোর্টিং প্ল্যাটফর্ম’ নির্ধারণ করেছে।
সম্প্রতি এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়া-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি আদেশ জারি করে ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই-সিএসই) পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে আদেশে ১৬টি নিয়ম উল্লেখ করে সেগুলোর সঙ্গে সমন্বয় ও প্ল্যাটফর্ম চালু করতে বলা হয়েছে।
বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এটা উপযুক্ত বলে মনে করে যে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এবং পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য কমিশনের সঙ্গে নিবন্ধিত সমস্ত প্রতিষ্ঠান ও সত্তা? বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (জরংশ ইধংবফ ঈধঢ়রঃধষ অফবয়ঁধপু) বিধিমালা, ২০১৯-এর অধীনে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেয়ার একটি একক সাধারণ অনলাইন যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম থাকবে।
তাই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং ঢঠওও) ধারা ২০অ দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগে কমিশন ডিএসই, সিএসই এবং নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে উল্লেখ নিয়মের অধীনে কমিশনে অনলাইনে প্রতিবেদন জমা দেয়ার একক সাধারণ প্ল্যাটফর্ম, যথা ‘ইঝঊঈ-জইঈঅ রিপোর্টিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া এ বিষয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং ঢঠওও) ৯নং বিধির উপ-বিধি (৩) এবং (৫) সহ পড়তে বলা হয়েছে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মের আদেশে উল্লেখিত ১৬টি নিয়মে বলা হয়েছে, ডিএসই বিদ্যমান অনলাইন রিপোর্টিং প্ল্যাটফর্ম ইঝঊঈ-জইঈঅ রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং সিএসই কমিশনের পূর্বানুমতি অনুসারে ইঝঊঈ-জইঈঅ রিপোর্টিং চালু না হওয়া পর্যন্ত প্ল্যাটফর্ম রক্ষণাবেক্ষণে বৈধ থাকবে। সেইসঙ্গে বিএসইসি-আরবিসিএ রিপোর্টিং প্ল্যাটফর্ম নিয়মের অধীনে সব নিবন্ধিত সংস্থার জন্য প্রতিবেদন জমার জন্য সাধারণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে বিবেচিত হবে। এছাড়া সব নিবন্ধিত সংস্থা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কমিশনের কাছে নিয়মের অধীনে প্রয়োজনীয় সব প্রতিবেদন জমা দেবে।
এদিকে প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নতির জন্য ডিএসই দায়ী থাকবে। তবে শর্ত থাকবে, ডিএসই প্ল্যাটফর্মের বড় উন্নয়ন বা উন্নতির জন্য কমিশনের অনুমোদন নেবে। সেইসঙ্গে সময়ে সময়ে কমিশন দ্বারা নির্ধারিত প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নতির জন্য সব নিবন্ধিত সংস্থা বা সত্তার কাছে ডিএসই ফি দাবি করার অধিকারী হবে, যা সব নিবন্ধিত সংস্থাগুলোকে এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। সেটা প্রতিটি আর্থিক বছরের জন্যও হতে পারে। কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ফি’র সময়সূচি ডিএসই তার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে এবং কমিশনকে জানিয়ে সব নিবন্ধিত সংস্থাকে অবহিত করবে।? প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নতির জন্য ডিএসই একটি নিবেদিত দল বরাদ্দ করবে এবং দল গঠনের পনের দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে তাদের ভূমিকা উল্লেখ করে দলের সদস্যদের তালিকা প্রদান করবে এবং ডিএসই দলের প্রতিটি সদস্যের কাছে থেকে ঘোষণা নেবে এবং ঘোষণা অনুযায়ী গোপনীয়তা নিশ্চিত করবে। সেইসঙ্গে কমিশনে এই ঘোষণার অনুলিপি পাঠাবে।
অন্যদিকে ডিএসই প্রতিটি নিবন্ধিত সত্তার জন্য প্ল্যাটফর্মে সর্বাধিক দুটি ব্যবহারকারী আইডি প্রদান করবে এবং বজায় রাখবে। প্রতিটি নিবন্ধিত সত্তাকে তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও সক্ষম রাখতে কমিশনের সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের ও ডিএসই-সিএসই’র সংশ্লিষ্ট বিভাগের সর্বোচ্চ তিন কর্মকর্তার জন্য প্ল্যাটফর্মে নিয়ন্ত্রক ব্যবহারকারী আইডি সরবরাহ করবে এবং বজায় রাখবে। যদি সংশ্লিষ্ট এখতিয়ারের অধীনে প্রযোজ্য হয়, তাহলে রিপোর্টিং সুবিধা রাখতে হবে। ডিএসইর ট্রেক হোল্ডারদের নিয়ন্ত্রক ব্যবহারকারী আইডি ডিএসই দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং সিএসই ট্রেক হোল্ডারদের ‘নিয়ন্ত্রক ব্যবহারকারী আইডি’ সিএসই দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং ডিএসই প্ল্যাটফর্মের সব ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ম্যানুয়াল প্রদান করবে।
এছাড়া সব নিবন্ধিত সংস্থা একক বা যৌথভাবে রিপোর্টিং প্ল্যাটফর্মে তাদের কর্মকর্তাদের সক্ষমতা উন্নয়নে কর্মসূচির ব্যবস্থা করতে পারে। প্ল্যাটফর্মটি বিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় সব রিপোর্টিং এবং কমপ্লায়েন্স পূরণ করতে ব্যবহার করা হবে। ডিএসই প্রতিটি আর্থিক বছর শেষ হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্ল্যাটফর্মের পর্যায়ক্রমিক সিস্টেম অডিট নিশ্চিত করবে এবং তার ১০ দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। সেইসঙ্গে প্ল্যাটফর্মের একটি পরিদর্শন বা সিস্টেম অডিট পরিচালনা করার প্রয়োজন হলে কমিশন যেকোনো ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠানকে যে কোনো সময় সিস্টেম অডিট পরিদর্শন বা পরিচালনা করার জন্য অনুমোদন দিতে পারে। ডিএসই এ বছরের ডিসেম্বর শেষের দিকে প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন সম্পন্ন করবে এবং নিয়মের অধীনে ডিএসই দ্বারা উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নিবন্ধিত সংস্থাগুলোর সব রিপোর্টিং কার্যকর হবে।
এ বিষয়ে নিশ্চিত করে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতিবেদন জমা ও সংরক্ষণের জন্য অনলাইন তথ্য প্ল্যাটফর্মের কাজ গত দুই থেকে আড়াই বছর ধরে চলছে। এর আগে একবার পরীক্ষামূলক চালু হলেও পরে কিছু ত্রুটির কারণে স্থগিত করা হয়। তবে এবার পরিপূর্ণভাবে চালুর বিষয়ে আদেশ ও নির্দেশনা এসেছে বলে জানান তিনি।