Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:25 pm

পুঁজিবাজারে এক মাসে ২০ হাজার ৫০০ নতুন মুখ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দীর্ঘদিন থেকে পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। কমছে অধিকাংশ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর। এর জের ধরে কমে গেছে সূচক এবং বাজার মূলধন। কিন্তু এর মধ্যেও পুঁজিবাজারের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ দেখা গেছে। এক মাসে পুঁজিবাজারে যোগ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ৫০০ নতুন মুখ। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের শেষ দিন বিও হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৬২ হাজার ৩১৩টিতে, যা আগের মাসের অর্থাৎ আগস্টের শেষ দিন ছিল ২৫ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৮টিতে। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসে বিও হিসাব বেড়েছে ২০ হাজার ৫১৫টি।
এদিকে বর্তমানে পুরুষ হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৬টি, যা আগস্ট মাসের শেষ দিন ছিল ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৪১৩টিতে। অর্থাৎ এ সময়ে পুরুষ বিও হিসাব বেড়েছে ১২ হাজার ৫৭৩টি। একইভাবে সেপ্টেম্বরে নারী হিসাবধারীর সংখ্যা সাত হাজার ৮৮২টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৮২ হাজার ৩৬০টিতে। আগস্টে নারী বিও হিসাব ছিল ছয় লাখ ৭৪ হাজার ৪৭৮টি।
অন্যদিকে এই সময়ে অর্থাৎ এক মাসে কোম্পানি হিসাব ৬০টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৯৬৭টিতে। আগস্টে কোম্পানি বিও হিসাব ছিল ১২ হাজার ৯০৭টিতে।
প্রসঙ্গত, বিদায়ী বছরে নির্বাচনের পরপরই ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। এই সময়ে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার হিড়িক পড়ে। পরে হঠাৎ করেই পুঁজিবাজারে ছন্দপতন দেখা দেয়। এ কারণে বাজারের প্রতি আগ্রহ কমে সাধারণ মানুষের। এই সময়ে এক মাসে নতুন বিও হিসাবের সংখ্যা পাঁচ হাজারের নিচে চলে আসে। কিন্তু বাজারে মন্দা থাকার পরও গত মাসে আবারও সন্তোষজনকহারে বিও খোলার প্রবণতা দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, বছরের শুরু থেকেই পুঁজিবাজার খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। যে কারণে বাজারের প্রতি সবারই একটা অনাগ্রহ তৈরি হয়। যার প্রভাব পড়েছে বিও অ্যাকাউন্ট খোলায়। বর্তমানে অধিকাংশ শেয়ারই বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। মূলত এ কারণেই বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে। কারণ পতনের পুঁজিবাজারে অনেকেই নতুন বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এই ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।
মূলত ২০১০ সালের পর থেকে বিও অ্যাকাউন্ট উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকে। বর্তমানে মোট বিও অ্যাকাউন্টের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে শেয়ারশূন্য। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে মোট বিওর মধ্যে শেয়ারশূন্য এবং ব্যবহার করা হচ্ছে না এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা সাড়ে ১৩ লাখের বেশি।
প্রসঙ্গত গত চার বছরে সময়মতো বিও ফি পরিশোধ না করায় বাতিল হয়ে গেছে প্রায় ছয় লাখ অ্যাকাউন্ট। সেকেন্ডারি মার্কেটের মন্দা পরিস্থিতি, সেই সঙ্গে আইপিও বাজারের নাজুক পরিস্থিতির জন্য এসব অ্যাকাউন্ট ঝরে গেছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
নিয়মানুযায়ী, জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব হিসাব বন্ধ হয় না।