স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে দেশি বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি ভালো অবস্থানে থাকলেও পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত মাত্র পাঁচটি। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের এ তথ্য অনেককে অবাক করবে। তাতে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে শীর্ষস্থানীয় বাকি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে উদ্যোগ যেমন নেই, তেমন আগ্রহ নেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর। এটা করা গেলে বাজারের মূলধন যেমন বাড়তো, তেমনি লাভবান হওয়ার সুযোগ পেতেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে ব্যাংকঋণ-নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়ে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারতো কোম্পানিগুলো। শীর্ষস্থানীয় যেসব ওষুধ কোম্পানি এখনও পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের এখানে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। পুঁজিবাজারে আসার ব্যাপারে তাদের মধ্যে যাতে উৎসাহ সৃষ্টি হয়, সেজন্য নেওয়া যেতে পারে বিশেষ পদক্ষেপ।
বস্তুত এ বাজারে তালিকাভুক্ত যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে মেনে চলতে হয় একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়মনীতি। জানা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানিগুলো এটা অনুসরণ করতে খুব একটা উৎসাহী নয়। এটা তাদের সন্ত্রস্ত মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যে বিদ্যমান নিয়মের মধ্যে থেকেই ভালো করছে, তা কে না জানে। ওই মনোভাব থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকরা যেন বেরিয়ে আসতে পারেন, সেজন্য তাদের বোঝানো ও উদ্বুদ্ধ করা দরকার। আমাদের ধারণা, পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোকে যদি এতে তালিকাভুক্ত করা যায়, তাহলে কাছাকাছি মানের অন্য কোম্পানিও বাজারে আসতে উৎসাহী হবে। এর ইতিবাচক প্রভাব নানাভাবে শুধু পুঁজিবাজারে নয়, পড়বে আমাদের ওষুধ শিল্পেও। ২০২১ সালকেন্দ্রিক এ শিল্প ঘিরে রফতানি আয় বৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জনেও এ কৌশল সহায়ক হবে।
আমরা জানি, ওষুধশিল্প দেশের অর্থনীতিতে উদীয়মান একটি খাত। দেশের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে এখানকার উৎপাদিত ওষুধের চাহিদা খাতটির সম্ভাবনারই ইঙ্গিত দেয়। বস্তুত এখন ওষুধ উৎপাদনে এশিয়ায় তালিকার ওপরের দিকে রয়েছে বাংলাদেশ। বিদ্যমান সম্ভাবনার বিকাশ ঘটানো গেলে এশিয়ায় আমাদের প্রথম স্থান অর্জনও সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। খাতটিতে সরকার যে ধরনের সহায়তা জোগাচ্ছে, তা থেকে এটা স্পষ্ট স্থানটি অর্জনে আগ্রহী নীতিনির্ধারকরা। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে কোম্পানিগুলোকে উৎসাহদানে তাদের জন্য প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ নেওয়া যায় কি না, সেটা ভেবে দেখতে বলবো সংশ্লিষ্টদের। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশের জন্য ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ছাড়ের যে সুযোগ রয়েছে, সেটা বহাল থাকবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ মেধাস্বত্বমুক্তভাবে ওষুধ উৎপাদনের জন্য আমাদের হাতে সময় আছে মাত্র ১৬ বছর। উল্লিখিত সময়ে সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে এসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান যথার্থই বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদে বাজার স্থিতিশীলের জন্য ভালো শেয়ারের কোনো বিকল্প নেই। বাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ার সংকট থাকলে ‘জাঙ্ক কোম্পানি’র আধিপত্য তৈরি হয়; যা শেষত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমরা মনে করি, শুধু উল্লিখিত বিষয়গুলো নয় পুঁজিবাজারে ‘ভালো’ কোম্পানির সংখ্যা বাড়াতে শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তকরণে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এজন্য তাদের ট্যাক্স সুবিধা প্রদানসহ যেসব সুপারিশ বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময় দিয়েছেন, সেগুলো বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। আমরা চাই, এসব ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার দ্রুত এগিয়ে আসবে। সম্ভাবনাময় কোনো খাত ঘিরে এমনি ধারার বিলম্ব গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:58 pm
পুঁজিবাজারে ওষুধ কোম্পানির অংশগ্রহণ বাড়ুক
সম্পাদকীয় ♦ প্রকাশ: