ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বিএসইসির চেয়ারম্যান হওয়ার পর আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। ১৭ মে ২০২০ নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির পরই তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগদানপত্রে স্বাক্ষর করে নতুন কর্মস্থলে যান। এর আগে সাধারণ বীমা করপোরেশনের (এসবিসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। গণমাধ্যম তাকে বিরল সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-সংগঠনের দায়িত্ব পালনে রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। বিশেষ করে তিনি ২০১৬ সালে এসবিসি চেয়ারম্যান হওয়ার পর প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেড়েছে বলে সাধারণ বীমা সূত্রে জানা গেছে। অনেকে বলেছেন, শেয়ারবাজারে গতি ও আস্থা ফেরাতে সফল নতুন কমিশন। তাদের উদ্যোগী কর্মকাণ্ড ও তৎপরতায় কম সময়েই শেয়ারবাজারে গতি ফিরেছে। একইসঙ্গে হারানো আস্থা ফিরে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কমিশনও বলেছে, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বোচ্চ সহযোগিতায় শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল পর্যায়ে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে তারা। যেমন ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠন, এককভাবে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ না থাকা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, লভ্যাংশ না দেয়া ও নামমাত্র লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানির জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, শেয়ারবাজারের ব্র্যান্ডিং ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন দেশে রোড শো আয়োজন এবং শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিতে বিভিন্ন আইন সংস্কার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু গতকাল শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদন ‘কেন নির্বাক ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা: ডজনখানেক কোম্পানিতে হাজার কোটি টাকার কারসাজি’ শীর্ষক প্রতিবেদন পাঠক বিশেষ করে বিনিয়োগকারীদের হতাশ করবে। এতে বলা হয়, গত দুই বছরে পুঁজিবাজারকে নিয়ে জুয়া খেলায় লিপ্ত হয়েছে একটি গোষ্ঠী। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বিএসইসি সব জেনেও নীরব ছিল। ফলে অন্তত ডজনখানেক কোম্পানিতে হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি হয়েছে। এতে লাখো বিনিয়োগকারী পুঁজি হারালেও লাভবান হয়েছে চিহ্নিত দুষ্টচক্র। শেয়ার বিজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত দুই বছরে এক ডজনের বেশি কোম্পানিতে শেয়ার কারসাজি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোম্পানির সঙ্গে মিলেমিশে কারসাজি করেছে জুয়াড়ি চক্র। আর এ চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন বিসিএস সমবায় ক্যাডারের কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরু। বিএসইসি প্রায়ই নসিহত করে গুজবে কান না দিতে। কিন্তু পুঁজিবাজারে কারা খেলোয়াড় বা দুষ্টচক্র, তা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। দুষ্টচক্র চিহ্নিত হওয়ায় ব্যবস্থা না নিলে বিনিয়োগকারীরা তো প্রতারিত হবেনই। নিরপেক্ষভাবে কঠোর ব্যবস্থা না নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়ার আহŸান হাস্যকর বৈকি। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা নিয়ে বিএসইসি পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজারে কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।